Friday , 18 October 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
বিশ্বব্যাপী শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ সনদ প্রণয়ন করেছিলেন মহানবী (সাঃ) আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে। তার প্রতিষ্ঠিত যুগপৎ নীতিমালা ও সফল দৃষ্টান্ত আজকের অধূনা বৈজ্ঞানিক বিশ্বেও অম্লান ও সমান কার্যকর। পৃথিবীতে মহানবী (সাঃ) আবির্ভাবকালীন আরব বিশ্বে অমানবিকতা, নির্লজ্জতা, অজ্ঞানতা এবং হিংস্রতার অক্টোপাসে আবদ্ধ ছিল। মানবাধিকার সম্পর্কে তাদের স্বচ্ছ ধারণা ছিল না বলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারবুল ফুজ্জার নামক সংঘটিত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বহু সন্তান পিতৃহারা হয়,নারী হয় স্বামী কিংবা পুত্র হারা। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যুদ্ধ বিগ্রহে। বিভীষিকাময় তাণ্ডবলীলা থেকে দেশে শান্তি, শৃঙ্খলা, সাম্য ও নিরাপত্তা বিধান এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি-সদ্ভাব বজায় রাখার লক্ষ্যে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নি:স্বার্থ, সাহসী ও উদার যুবকদের সমন্বয়ে হিলফুল ফুযুল প্রতিষ্ঠা করেন।সংগঠনটি তার উদ্দিষ্ট কার্যাবলী পরিপালনে সাফল্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
মহানবী (সাঃ) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে ‘মদিনার সনদ’ নামে প্রথম লিখিত একটি সনদ প্রণয়ন করেন। জারিকৃত এই সনদে মোট ৫২টি ধারা ছিল ,যার অনেকগুলো শান্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক। এতে উল্লেখ করা হয়, সনদে স্বাক্ষরকারী সকল সম্প্রদায় একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে এবং সব সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে এবং কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। নাগরিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও ধর্ষণ নিষিদ্ধ। দুর্বল ও অসহায়দের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে একে রক্ষা করার জন্য সকলে সম্মিলিত প্রয়াস চালাবে। এভাবে মদীনা সনদের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতি,ধর্ম ও গোত্রের মানুষের পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমান অধিকার ভোগ করার নিশ্চয়তা বিধানের নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই প্রথম।
বিদায় হজ্জে প্রদত্ত মহানবী সা. এর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন, আজকের এই দিন, এই মাস ও এ শহর তোমাদের নিকট পবিত্র। অনুরূপভাবে পরস্পরের মাল-সম্পদ ও জীবন সেভাবে তোমাদের কাছে সম্মানিত। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (স)-এর হুদায়বিয়ার সন্ধি ও শান্তিপূর্ণ ‘মক্কা বিজয়’ মানব ইতিহাসের এক চমকপ্রদ অধ্যায়। নারী-পুরুষের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে মহানবী সা. ঘোষণা দেন, নারী-পুরুষ পরস্পরের অঙ্গভূষণ, একে অপরের পরিপূরক।
সংখ্যালঘূদের অধিকার দৃঢ়তার সাথে সংরক্ষণ করেছিলেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত প্রত্যেক সংখ্যালঘূর জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করা সরকার ও মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য। অবলীলাক্রমে বলতে সংকোচ নেই শান্তি, শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজীর স্থাপন করছে। মানবাধিকার সনদকে পদতলে পিষ্ট করে পশ্চিমা মদদে ভারতে মহানবী (সা.) এর অবমাননা ও সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতন, ফিলিস্তিনি নির্বিচারে গণহত্যা, মায়ানমারে মুসলিম নিধনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আজ প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতন যা মানবাধিকার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মানবতার ধংসাত্মক উৎপীড়ন, নিপীড়ন ও নিগ্রহের অবসান ঘটিয়ে সারা বিশ্বে শান্তি, শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ প্রদত্ত এবং মহানবী (স:) প্রদর্শিত শ্বাশ্বত জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply