Sunday , 24 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
বিশ্বব্যাংকের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে সতর্কতার সঙ্গে
--ফাইল ছবি

বিশ্বব্যাংকের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে সতর্কতার সঙ্গে

অনলাইন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যঃসমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার এক নতুন দিগন্তের সূচনা। প্রধানমন্ত্রীর এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল মূলত বিশ্বব্যাংককে কেন্দ্র করেই। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের অর্ধশতাব্দীর যে উন্নয়নের সম্পর্ক রয়েছে তাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্বব্যাংক নিউ ইয়র্কের প্রধান কার্যালয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের এই বিশেষ আয়োজনে উপস্থিত থেকে কথা বলেছেন মন খুলে। বিশ্বব্যাংকও প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানিত করেছে যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং প্রশংসাও করেছে উচ্চ:স্বরেই।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ৫০ বছরের মাইলফলককে যেভাবে স্মরণ করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যেভাবে সম্মানিত করেছে তেমনটা এর আগে কখনো হয়েছে কি না আমাদের জানা নেই। বিশ্বব্যাংক পৃথিবীর বহু দেশের উন্নয়নে সহযোগী অংশীদার এবং অনেক দেশের সঙ্গে তাদের ৫০ বছরেরও অধিক সময়ের সহযোগিতার সম্পর্ক থাকলেও বিশ্বব্যাংক এভাবে ঘটা করে সেই সম্পর্ক স্মরণ করেছে—এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এমন বিশেষ সম্মান পেলেন। নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা।

রাজনীতির যে সফলতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন তা অবশ্য খালি চোখে দেখা বা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করা যাবে না। আমরা যাঁরা অর্থনীতি ও ফিন্যান্স নিয়ে কাজ করি তাঁদের কিছু রাজনীতির খবরও রাখতে হয়। সেসব খবর বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টতই বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগদান করে বিশেষ রাজনৈতিক সফলতা ঘরে তুলতে পেরেছেন। বিশ্বব্যাংক একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যাংকের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে সতর্কতার সঙ্গেআর্থিক সংস্থা হলেও এর খুঁটির শক্তি নিহিত আছে বিশ্বের ক্ষমতাধর এক রাষ্ট্রের হাতে। সেই রাষ্ট্রের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং সেই মহাক্ষমতাধর রাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া যে বিশ্বব্যাংকের বৃহৎ কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে না তা খুব সহজেই অনুমেয়। বিশ্বব্যাংক যে সেই রাষ্ট্রের সম্মতি পেয়েই এভাবে বাংলাদেশের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে—তা আর বুঝতে বাকি থাকে না। এ রকম একটু আভাস তো আইএমএফের প্রধানের বক্তব্যের মধ্যেও পাওয়া যায়। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নতি ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়োজন আছে।

কানাডার একটি নামকরা নির্মাণ কম্পানি এসএনসি লাভালিনও বিশ্বব্যাংকের সেই ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছিল। এসএনসি লাভালিন পদ্মা সেতুর একটি অংশের কাজ করতে চেয়েছিল এবং সেই কম্পানির নাম জড়িয়ে বিশ্বব্যাংকের ভুল-বোঝাবুঝির সূত্রপাত। সেই কম্পানির নাম জড়িত থাকার কারণেই কানাডার আদালতে মামলা হয়েছিল এবং সেই মামলার রায় বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে যায়। কানাডার এসএনসি লাভালিনকে জড়িয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল তা আদালতে ভুল প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এসএনসি লাভালিন কিন্তু আজ পর্যন্ত টুঁ শব্দটি করেনি। বাংলাদেশ তবু পদ্মা সেতু নির্মাণে সফল হয়েছে; কিন্তু একই মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়ে এসএনসি লাভালিন কাজটাও পায়নি, তার পরও তারা এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেনি।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ব্রিকস ব্যাংকের জন্ম। আজকের বিশ্বরাজনীতিতে যে অস্থিরতা তার সূত্রপাত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে, যখন এই ব্রিকস ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। অবশেষে বিশ্বরাজনীতির এই ডামাডোলের মধ্যে ব্রিকস ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ব্যাংকের ব্রাজিলিয়ান প্রধান এরই মধ্যে সদস্য দেশগুলোকে ঋণ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং এটাও নিশ্চিত করেছেন যে প্রয়োজনে ৩০ শতাংশ ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় প্রদান করা হবে। নিশ্চয়ই ব্রিকস ব্যাংকের এই অগ্রগতির খবর বিশ্বব্যাংকের কাছে যেমন আছে, তেমনি আছে তাদের পেছনের শক্তির কাছেও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাংক চাইবে যে তাদের আর্থিক সহযোগিতা নেওয়া দেশগুলো যেন কোনোভাবেই এই ব্রিকস ব্যাংকের দিকে অতি মাত্রায় ঝুঁকে না পড়ে। এ কারণেই বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণের যে চমৎকার এক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে অতি সতর্কতার সঙ্গে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply