নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯)শনাক্তের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। এই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯৬ জন। বিশ্বে একদিনে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনার পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সময় বুধাবার (২৯ ডিসেম্বর) এবং বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৭ হাজার ৫৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৯৮ হাজার ১০১ জন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে রোগী শনাক্তের রেকর্ড এটা। প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দৈনিক করোনা শনাক্তের যে তথ্য দেয়, তার ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান বের করা হয়েছে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৪১ জনে। বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩০৬ জন।
বিশ্বজুড়ে সাত দিনে করোনাভাইরাস শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। ২২ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৯ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
২২ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগী শনাক্তের সংখ্যা থেকে বোঝা যায়, এটি অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে শনাক্ত ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে করোনা শনাক্তের রেকর্ড হয়েছিলো ২৩ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে। ওই সময়ে এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৮ লাখ ১৭ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলছে, গত সপ্তাহে সারা বিশ্বে রেকর্ড করা করোনা শনাক্তের সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আমেরিকা অঞ্চলে। সেখানে অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য এই ভাইরাসের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়া এবং ওমিক্রন ধরনটির অতি সংক্রমণশীলতার কথা বলেছে। তবে ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লেও করোনায় মৃত্যু বাড়েনি। তিন সপ্তাহ ধরে করোনায় মৃত্যু কমছে। গত এক সপ্তাহে বিশ্বে করোনায় দৈনিক গড়ে ৬ হাজার ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত বছরের অক্টোবর মাসের পর থেকে সর্বনিম্ন। এ বছরের ২০ থেকে ২৬ জানুয়ারি করোনায় দৈনিক গড়ে ১৪ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু দেখেছে বিশ্ব।
২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এসময়ে দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭০ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৭৭৭ জন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮৩ হাজার ১৮১ জন। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৬ জন ও মারা গেছেন ৮ লাখ ৪৪ হাজার ২৭২ জন। দৈনিক সংক্রমণের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ফ্রান্সের অবস্থান। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হন ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৪৭ জন। নতুন করে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ৯ হাজার ১২৮ জন। মহামারি শুরুর পর এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৪ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৮৪ জন।
আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ২৭১ জন এবং মারা গেছেন ৪ লাখ ৮০ হাজার ৫৯২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৮৫ জন।
তালিকায় এর পরের স্থানগুলোতে রয়েছে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, তুরস্ক, জার্মানি, ইরান, স্পেন, ইতালি ও আর্জেন্টিনা। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩২ নম্বরে। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৮ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৬৩ জন। দেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছেন মোট ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪১৬ জন।