সৈয়দ এনামুল হক
প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক সকালবেলা
দৈনিক সকালবেলা সুদীর্ঘ ২৫ বছর পেরিয়ে আজ ২৬ বছরে পদার্পণ করছে, এমন খুশীর দিনে আনন্দের সাথে সাথে গভীর দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে সদ্য প্রয়াত দৈনিক সকালবেলার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রতিষ্ঠাতা, প্রকাশক ও সম্পাদক মরহুম সৈয়দ এনামুল হক কে স্মরণ করে (জন্ম: ১৬/০৪/১৯৫৬ ইং-মৃত্যু: ২৭/১০/২০২০ইং)। মাত্র ৬৪ বৎসর বয়সে আমরা হারিয়েছি এই মহান ব্যক্তিত্বকে। তাঁর এই অকাল প্রয়াণ শুধুমাত্র দৈনিক সকালবেলা পরিবার নয় দেশ ও জাতিকে ও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। সংবাদপত্র জগতের এই কিংবদন্তী উজ্জ্বল নক্ষত্র জনাব সৈয়দ এনামুল হক একজন লড়াকু সৈনিক, আপোষহীন সাংবাদিক নেতা (মহাসচিব, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ) ছিলেন। যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছেন দেশ, জাতি এবং গণমাধ্যমকে। সাংবাদিকদের কাছে তিনি ছিলেন এক মহান আদর্শ। ৯০ এর দশকে ইংল্যান্ডে থাকাকালীন সময়ে ইইঈ তে কাজ করতে করতে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশে ফিরে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করবেন এবং করেছিলেনও তাই। এভাবেই ১৯৯৭ সালে সকালবেলার আত্মপ্রকাশ ও যাত্রা শুরু। এরপর নিরলস এগিয়ে চলা। সুদীর্ঘ ২৪ টি বৎসর একটি স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিক সকালবেলা’কে প্রতিদিন প্রকাশিত করা, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, সত্য প্রকাশে অকুন্ঠ আপোষহীন থেকে সামনে এগিয়ে গেছেন। তিনি সংকট ও ক্রান্তিলগ্নে বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সমস্যার সমাধান করেছেন। এভাবে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দৈনিক সকালবেলাকে আজকের এই অবস্থানে তিনি নিয়ে এসেছেন। তাই আজ তাঁর এই অকাল প্রয়াণ আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। আজ সকালবেলার ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২৬ বৎসরে শুভ পদার্পণ উপলক্ষে এই মহান ব্যক্তিত্ব দৈনিক সকালবেলার প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ এনামুল হক কে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি, নিবেদন করছি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী ও অসীম ভালোবাসা।
সাংবাদিক জনাব সৈয়দ এনামুল হক সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক সকালবেলা’একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। সংবাদপত্র জগতের এক কিংবদন্তি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জনাব এনামুল হক নিজেকে একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ ও গর্ববোধ করতেন। সাংবাদিকদের জন্য তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিকতা যে শুধু পেশা নয়, মহৎ পেশা তা তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর কাজে। নৈতিকতা, সততা, মুল্যবোধ ও নিরপেক্ষতার তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টানন্ত, এক বিরল ব্যক্তিত্ব। তিনি বিশ্বাস করতেন সংবাদ পত্র সমাজের দর্পন এবং সমাজ বদলের হাতিয়ার। একমাত্র সংবাদপত্রই দেশ ও জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে পারে, বদলে দিতে পারে সমাজ। সমাজ সচেতনার অংশ হিসেবেই তিনি সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করেছিলেন এবং আজীবন সুন্দর সমাজ বিনির্মানে লড়াই করে গিয়েছেন।
ছাত্র জীবন থেকেই জনাব এনামুল হক সমাজ সচেতনতা মূলক লেখালেখি শুরু করেন। এই লেখালেখির হাত ধরেই ছাত্র জীবনেই তার সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ। সাংবাদিকতার শুরুর দিকে কাজ করেছেন অনেক প্রতিথযশা জাতীয় দৈনিকে যেমন আজাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, গণকণ্ঠ, জনকন্ঠ ইত্যাদি। সাংবাদিক হিসেবে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দু’টি জাতীয় দৈনিকে তিনি ব্যুরো প্রধান (খুলনা) হিসেবে দীর্ঘদিন সুনামের সাথে কর্মরত ছিলেন এবং দক্ষতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নিজের এবং সহকর্মী অন্যান্য সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মানোন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। সাংবাদিকতাকে একজন সাংবাদিক যেন মহৎ পেশা মনে করেন এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করতেন। পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি নিজে বিভিন্ন সময় নতুন সাংবাদিকদের জন্য বিভিন্ন ট্রেনিং ও কর্মশালার আয়োজন করতেন। বর্তমানে অনেক দক্ষ সাংবাদিকের হাতেখড়ি (সাংবাদিকতায়) হয়েছিল জনাব এনামুল হকের হাতে। অনেকেই তাকে গুরু মানেন এবং শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
পরিশেষে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এই মহান মানুষটির প্রতি নিবেদন করছি বিনম্র শ্রদ্ধা। বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু সমাজে, সততা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের এক বিরল দৃষ্টান্ত ছিলেন সৈয়দ এনামুল হক।