অনলাইন ডেস্ক:
নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মোকাবেলায় বিশ্বের একেক দেশ একেক ধরনের টিকায় ঝুঁকছে। একেক দেশ তার ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্য দিচ্ছে নির্দিষ্ট টিকা গ্রহণের শর্ত। এর ফলে টিকা নেননি এমন বিদেশগামী কর্মীদের টিকা নিতে হচ্ছে তাঁদের গন্তব্য অনুযায়ী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, কোন দেশ কোন টিকা অনুমোদন করেছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য চাহিদামতো টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিদেশগামী কর্মীদের পাশাপাশি বিদেশগামী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও এই ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ফাইজার ও অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়াগামী অনিবাসী বাংলাদেশি, বিশেষ করে প্রবাসী কর্মীদের ফাইজারের টিকা দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাহরাইন ফাইজার, কোভিশিল্ড ও সিনোফার্মের টিকা অনুমোদন করেছে। ওই দেশটিতে যেতে আগ্রহী প্রবাসী কর্মীদের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
ব্রুনেই কর্তৃপক্ষ ফাইজার, মডার্না, জেনসেন, অক্সফোর্ড ও সিনোফার্মের টিকা অনুমোদন করেছে। ব্রুনেইগামী প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে মডার্না বা সিনোফার্মের টিকা। ফাইজার, মডার্না, জেনসেন ও অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন দেওয়ায় কানাডায় যেতে চাইলে বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা।
সাইপ্রাসগামী প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দেওয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা। সাইপ্রাস ফাইজার, মডার্না, জেনসেন ও অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের যাঁরা মিসরে যাবেন তাঁদের দেওয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা। মিসর কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে অক্সফোর্ড, সিনোফার্ম, স্পুটনিক ভি ও সিনোভ্যাকের টিকা অনুমোদন করেছে। ওই দেশে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের দেওয়া হবে সিনোফার্মের টিকা।
ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ও গ্রিস ফাইজার, মডার্না, জেনসেন ও অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন করেছে। ওই দেশগুলোতে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি কর্মীদের দেওয়া হবে মডার্নার টিকা। ফাইজার ও সিনোভ্যাকের টিকা অনুমোদনকারী হংকংয়ে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি কর্মীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে।
হাঙ্গেরি কর্তৃপক্ষ ফাইজার, মডার্না, জেনসেন, অক্সফোর্ড, সিনোফার্ম, স্পুটনিক ভি ও ক্যানসিনো টিকা অনুমোদন করেছে। হাঙ্গেরিগামী বাংলাদেশি কর্মীদের দেওয়া হবে মডার্নার টিকা। প্রতিবেশী ভারত মডার্না, অক্সফোর্ড, স্পুটনিক ভিড ও কোভ্যাক্সিন টিকা অনুমোদন করেছে। ভারতগামী বাংলাদেশি কর্মীদেরও মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। মডার্না, অক্সফোর্ড, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক টিকা অনুমোদন দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। ওই দেশটিতে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা।
অক্সফোর্ড, স্পুটনিক ভি, কোভ্যাক্সিন, শিফা ফার্মড—এই চার ধরনের টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইরান। বাংলাদেশ থেকে ওই দেশটিতে যে কর্মীরা যাবেন তাঁদের দেওয়া হবে অক্সফোর্ডের টিকা।
ইরাকগামী বাংলাদেশি কর্মীদের ফাইজার বা অক্সফোর্ডের টিকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আয়ারল্যান্ড, ইতালিগামীদের মডার্নার টিকা, জাপানগামীদের ফাইজারের টিকা, জর্দানগামীদের সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সৌদি আরব ও কুয়েত ফাইজার, মডার্না, জেনসেন ও অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন করেছে। সৌদি আরব ও কুয়েতগামীদের ফাইজার বা মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া লেবাননগামীদের সিনোফার্ম, মালয়েশিয়াগামীদের ফাইজার ও মালদ্বীপগামী প্রবাসী কর্মীদের মডার্না বা সিনোফার্ম টিকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মালিগামী প্রবাসী কর্মীদের অক্সফোর্ড, মরিশাস, মরক্কো ও নেপালগামীদের সিনোফার্ম ও নেদারল্যান্ডগামী বাংলাদেশি কর্মীদের মডার্নার টিকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডগামীদের ফাইজার, নরওয়েগামীদের মডার্না, ওমানগামীদের ফাইজার এবং ফিলিপাইন, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া ও রোমানিয়াগামীদের মডার্নার টিকা দিতে বলা হয়েছে।
সার্বিয়াগামী বাংলাদেশিদের নিতে হবে সিনোফার্মের টিকা। সিসিলি ও সিঙ্গাপুরগামী কর্মীদের নিতে হবে মডার্নার টিকা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্কগামীদের দেওয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা।
স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রগামী কর্মীদের মডার্নার টিকা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের মডার্না বা সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
চীন কর্তৃপক্ষ ওই দেশে প্রবেশের জন্য চীনা টিকা নেওয়ার শর্ত দিয়েছে। সে অনুযায়ী, চীনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সিনোফার্ম টিকা দেওয়ার কাজ চলছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বেশির ভাগ দেশই তাদের দেশে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট টিকার পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করার শর্ত দিচ্ছে। অনেক দেশ টিকা না দেওয়া থাকলে প্রবেশের অনুমতি দেবে না। আবার কোনো কোনো দেশ তাদের অনুমোদিত টিকা নেওয়া না থাকলে ১৪ দিন নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের শর্ত দিয়েছে। সেটি অনেক ব্যয়বহুল। এ কারণে সরকার বিশেষ করে, প্রবাসী কর্মীদের গন্তব্য অনুযায়ী বাছাই করা টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।