অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান এবং নারী-শিশুপাচার বন্ধে বিজিবিকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, ‘একটা আধুনিক যুগে আমরা প্রবেশ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। কাজেই আমাদের বর্ডার গার্ড সেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান, নারী ও শিশুপাচারসহ সীমান্তে যেসব অপকর্ম হয়, সেগুলো বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে আমরা বিশেষভাবে নজর দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৯৫তম ব্যাচ রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বিজিবির ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের সব সদস্যকে সফলভাবে তাঁদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করায় অভিনন্দন জানিয়ে শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘সব সময় মনে রাখতে হবে, যেকোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য সব থেকে বেশি শৃঙ্খলার প্রয়োজন। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখে সবাইকে চলতে হবে। বাংলাদেশ যে আদর্শ নিয়ে স্বাধীন হয়েছে, সে আদর্শ নিয়েই চলতে হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে কর্তব্য পালনে নির্ভীক থাকতে হবে। আর অধস্তনদের প্রতিও সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশটাকে ভবিষ্যতে যেন আমরা আরো উন্নত করতে পারি, সেদিকে লক্ষ রেখেই সকলে কাজ করবেন। সেটাই আমি চাই।’ তিনি বিজিবির চার মূলনীতি—‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায়’ উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সবাইকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এই দেশটা আমাদের, আপনাদের, আমাদের সকলের। এই দেশ উন্নত হলে আপনার বাবা-মা-ভাই-বোন এবং ভবিষ্যৎ বংশধররা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে। সেই কথাটা সব সময় আপনাদের মনে রাখতে হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বত্তৃদ্ধতা করেন। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার থেকে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। তিনি নবীন সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজও উপভোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এই বাহিনীর তৃতীয় রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আজ আপনাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি, অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হলো চোরাচালানি বন্ধ করা। তোমাদের কাছে আমার হুকুম, স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তোমরা পারবা। এ বিশ্বাস তোমাদের উপর আমার আছে। আশা করি, তোমরা স্মরণ রাখবা। মনে রাখতে হবে, স্মাগলারের কোনো জাত নাই, ধর্ম নাই, তারা মানুষ নামের নরপশু। তারা এ দেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বক্তব্যে জাতির পিতার যে নির্দেশনা রয়েছে, আমি আশা করি, আপনারা তা মেনে চলবেন। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি এই অপকর্মগুলো রোধ করতে আপনারা আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। কারণ, এই কথাগুলো এখনো প্রাসঙ্গিক।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ ও জাতির প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে—এই দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত উন্নত হবে, আপনাদের পরিবারগুলোও উন্নত হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবিকে আরো শক্তিশালী করা এবং সীমান্তের প্রতিটি জায়গায় যেন তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘বর্ডার গার্ড ভিশন-২০৪১’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ তাঁর সরকার এখন বিজেবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছে।
সব বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক হিসেবে বক্ষ নম্বর-৪৩১ রিক্রুট মো. খোকন মোল্লা প্রথম স্থান অর্জন করায় এবং বক্ষ নম্বর-৬৮৭ রিক্রুট হাসিনা আক্তার বিথি শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হওয়ায় উভয়কে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা করোনার সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে দেশবাসীকে পুনরায় সতর্ক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা করোনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার আমরা ৪০ ভাগ থেকে ২০.৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম আরো দুই-তিন ভাগ কমিয়ে আনার। কিন্তু করোনার কারণে সেটা কিছুটা হয়তো থেমে গেছে। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে যেখানে আছেন (সরকারি কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত), তাঁরা হয়তো অসুস্থ হচ্ছেন, তার পরও দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
তিনি এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং করোনাকালীন জনগণের কষ্ট লাঘবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা এবং আমজনতার জন্য তাঁর সরকারের দেওয়া বিভিন্ন প্রণোদনার উল্লেখ করেন। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে আবারও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বিজিবি সদস্যদের করোনাভাইরাস যেন ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘নিজে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবদের সুরক্ষিত রাখার উদ্যোগ নেবেন।’
করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় যা যা করণীয়, এর সবই সরকার করছে উল্লেখ করে তিনি ভ্যাকসিন সংগ্রহেও তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য আমরা টাকার বরাদ্দ দিয়ে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।’ শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের সময়ে বিজিবির উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সূত্র : বাসস।