সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনাসহ অন্য সদস্যদের যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন চায় ঢাকা। মিয়ানমার সমুদ্রপথে তাদের ফিরিয়ে নিতে চায়। তবে আকাশপথ বা সমুদ্রপথে তাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মিয়ানমার সংঘাতে সৃষ্ট উদ্বেগের কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতিসংঘকে লিখিতভাবে জানাবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।
মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের পটভূমিতে বাংলাদেশ কী ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে—এমন প্রশ্নও উঠেছিল ব্রিফিংয়ে। জবাবে মুখপাত্র বলেন, মিয়ানমারের চলমান সংঘাত তার অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এর ফলে বাংলাদেশের জনসাধারণ, সম্পদ বা সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে যেন হুমকির সম্মুখীন না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি সুবিধাজনক সময়ে স্বেচ্ছায়, টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সতর্ক রয়েছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কস্থ স্থায়ী মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। মিয়ানমার সংকট উত্তরণের জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যেকোনো উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি অনিবার্যভাবে থাকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কেন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের ঢুকতে দিচ্ছে এবং ফেরত পাঠানোর রুট নিয়ে আলোচনায় সময়ক্ষেপণ হচ্ছে কি না জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের নিয়মিত বাহিনী বিজিপির সদস্যদের আশ্রয় দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি এক করে দেখা ঠিক হবে না। আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের নিরাপদ দ্রুত প্রত্যাবাসনই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বিমান বা নৌরুটের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ না বা কোনো পূর্বশর্ত নয়।’
মুখপাত্র বলেন, বিমানযোগে প্রত্যাবাসন দ্রুততম সময়ে করা সম্ভব বিবেচনায় বাংলাদেশ এ প্রস্তাব দিয়েছিল। মিয়ানমার কিছুদিন আগে ভারত থেকে বিমানযোগে সেনা নিয়ে এসেছিল। তাই এ প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে এসব ব্যক্তির প্রত্যাবাসন চায়। এখানে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। আকাশপথেই হোক বা সমুদ্রপথেই হোক, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি একান্ত জরুরি।’