বরগুনা প্রতিনিধি:
প্রয়াত গনসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের বিখ্যাত গান মায়ের একদার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম ,পাপস বানাইয়া দিলেও সেই ঋনের শোধ হবে না ,এমন দরদি ভবে কেউ হবে না মা আমার মা- এই গানটিও হয়তবা বিধবা বৃদ্ধা আলেয়া (৬৫) এর পুত্রদ্বয়ের পাষাণ হ্রদয়ে একটু দাগ কাটেনি ।
মা কথাটি ছোট্র অতি কিন্তু যেন ভাই , ইহার চেয়ে মিষ্টি মধুর ত্রি-ভূবনে নাই- এই কবিতাও যেন বিধবা আলেয়ার পুত্র মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব (৩০)’র মন স্পর্ষ করতে পারেনি।
বিচারের বাণী নিবৃতে কাঁদে , পুত্র ও পুত্রবধুর নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া বিধবা আলেয়া বেগম (৬৫) কি ? স্বামীর ঘরে আশ্রয় পাবে- ফিরে পাবে কি তার অধিকার এমন প্রশ্ন সকল বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের।
মারধর করে স্বামীর ভিটা-বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া বিধবা আলেয়া বেগম (৬৫) এ ঘটনায় গত ২০ জুন রোববার ও ৩০ জুন বুধবার বরগুনা চীফজুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেস্ট আদালতে নিজ পুত্র ও পুত্রবধুর নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
এর মধ্যে বৃদ্ধা আলোয়া বেগম (৬৫) ৩০ জুন চীফজুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেস্ট আদালতে ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলায় দায়ের করেন । মামলার আসামিরা হলেন পুত্র মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) , পুত্রবধু অনিতা (৩০) , আরেক পুত্রবধু ইভা , নাতী আলিফ, এবং প্রতিবেশি দুলাল । এ মামলায় পুত্রবধু অনিতার নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়। আনিতা (১৫ জুলাই) বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। পরে ১৮ জুলাই ১ মাসের মধ্যে শ্বাশুরীর সাথে আপোষ-মীমাংসার শর্তে ১শ টাকার স্টাম্পে মুচলেকার মাধ্যমে পুত্রবধু অনিতা জামিন পায়।
অপরদিকে ২০ জুন আলেয়া বেগমকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় তিনি ৩ জনকে আসামী করে আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলো- পুত্র মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব (৩০) ও পুত্রবধু অনিতা (৩০) । এ মামলায় বিজ্ঞ আদালত আলোয়ার ২ পুত্র মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব (৩০) এর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে।
(৯ আগস্ট) সোমবার আসামীরা নথি উপস্থাপন দিয়ে আদালতে হাজির হন। পরে ঐ দিন দুপুরে চীফজুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেস্ট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তাদের শর্তসাপেক্ষে জামিন দেয়।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, ১৬ আগস্ট সোমবার এ মামলার আসামিরা আদালতে হাজির হলে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত পুনরায় তাদের শর্তসাপেক্ষে জামিন বর্ধিত করা হয় ।
বৃদ্ধা বিধবা আলেয়া বেগম (৬৫) কে নিজ ঘরে আশ্রয় দিতে কয়েক দফা চেষ্টাও করেও ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। বৃদ্ধা আলেয়ার স্বামীর ঘরে আজ অবধি আশ্রয় হয়নি। পুত্রবধু অনিতাকে জামিন পেয়ে আবারও আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। অপরদিকে এ মামলায় জামিন পেয়ে পুত্র মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব (৩০) ও পুত্রবধু অনিতা (৩০) আরও বে-পরোয়া হয়ে উঠেছে প্রতিবেদকে এমনটি জানিয়েছে বৃদ্ধা আলেয়া।
তিনি আরও জানান, গত রোজার ঈদ থেকে আজ পর্যন্ত পথে পথে ঘুরছি। এসপি সাহেবের নির্দেশে ওসি সাহেব স্থানীয় মেম্বরদের নিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে উঠিয়ে দিলে রাতে পুত্রবধু ঘর থেকে নামিয়ে দিয়েছে। আমি পুলিশ সুপার স্যারকে জানানোর পরেও এখনো কোন বিচার পাইনি। এখন বিচার পাওয়ার আশায় আদালতের দিকে চেয়ে আছি।
এ ব্যাপারে বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম তারিকুল ইসলাম প্রতিবেদকে জানান, আমি এসপি স্যারের নির্দেশে বৃদ্ধা আলোয়া বেগম (৬৫) কে সন্ধ্যা ঘরে উঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে আবার ঐ দিন রাতে ঘর বের করে দেয়া হয়। এর পর আমি আর কিছুই জানিনা। তিনি আরও জানান এরপূর্বে বিষয়টি আমরা অবহিত হয়ে ১৬ জুলাই বিকালে আমি ও এসপি ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরে খাবার না থাকায় অভুক্ত বৃদ্ধা আলোয়া বেগম (৬৫) কে খাবার দিয়ে এসেছি।
উল্লেখ্য প্রায় ১ বছর পূর্বে স্বামী মুজাফফর হাওলাদার মারা যায়, বৃদ্ধা বিধবা আলেয়া (৬৫) কন্যা মনিরা কে নিয়ে মৃত স্বামীর ঘরে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করে। মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব পুত্রদ্বয় তাদের পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের মা আলেয়া ও বোন মনিরার কোন ভরণ পোষণ দেয় না। উল্টো বাবা মারা যাবার পরে মা-বোনের ফরায়েজ অনুসারে সম্পত্তির প্রাপ্ত অংশটুকু বন্ধক রেখে সব টাকা পয়সা নিয়ে যায় ঐ দুই ছেলে এর প্রতিবাদ করায় গত ১২ জুন সকালে মা ও বোনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ছেলে মনিরুজ্জামান জুয়েল (৩৫) ও কামরুজ্জামান সোয়াইব (৩০) ও বড় ছেলে স্ত্রী অনিতা (৩০)। প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মা ও বোনের ঘরে থাকা মালামাল ও স্বর্নালংকার চুরি করে নেয় এমন অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী মা আলেয়া বেগম (৬৫ ) আদালতের শরনাপন্ন হন এবং পুত্র ও পুত্রবধরু নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মাকে খুনের উদ্দোশ্যে মারধর করে বাড়ি-ঘর থেকে এক কাপড়ে তাড়িয়ে দেয় , পুত্র ও পুত্রবধু তাড়া খেয়ে বৃদ্ধা বিধবা আলেয়া (৬৫) কন্যা মনিরা প্রতিবেশি দেবরের ঘরে আশ্রয় নেয়। পুত্র ও পুত্র বধুর হুমকিতে সেখানে তাদের আশ্রয় হয়নি । গত রোজার ঈদ থেকে এ পর্যন্ত তাদের মা-মেয়ের জীবন কাটে পথে পথে। প্রশাসন পক্ষ থেকে তাদের খাবার সহযোগীতা করা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী বৃদ্ধা বিধবা আলোয়া বেগম (৬৫) কে তার নিজ ঘরে আশ্রয় দিতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিরা ।