ইসরাইলের দোসর বিএনপি-জামায়াতকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা। তারা বলেছেন, ইসরাইয়েলি বাহিনী যেভাবে নিরীহ-শান্তিকামী ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতা চালাচ্ছে। একইভাবে ইসরাইলের দোসর বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র বাহিনী দেশে হত্যা-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর-লুটপাট চালাচ্ছে। তারা সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।
গণতন্ত্র ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় আনীত সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সব কথা বলেন তারা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারি দল আওয়ামী লীগের আমীর হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিসম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরিকর ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙা ও ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।
আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিতে তা সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গাজায় যেটা হচ্ছে, তা নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ফিলিস্তিনিরা এটাকে মহাদুর্যোগ বলে আখ্যায়িত করেছে। সেখানে বৃষ্টির মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েলি বাহিনী।
হাসপাতাল-স্কুল, ঘরবাড়ি, মসজিদ-গির্জা কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। এটা একটা অমানবিক বিষয়। ইসরায়েল যুদ্ধের নামে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের জল্লাদ বাহিনী একাত্তরে পাকিস্তানের মতো গণহত্যা চালাচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াত ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে।
তারা মানবতার শত্রু। তারা ইসরায়েলের অনুকরণে সমাবেশ ও হরতালের নামে মানুষ হত্যা ও অগ্নিসন্ত্রাস করছে। ইসরায়েল বাহিনী গাজায় হাসপাতালে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, আর বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত হাসপাতালে ভাঙচুর ও অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ করছে। তাই সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
ফিলিস্তিনে চরমতম যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে দাবি করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম পৃথিবীর শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধান (যুক্তরাষ্ট্র) সেখানে গেলেন। গিয়ে নেতানিয়াহুর (ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোলাকুলি করলেন এবং হামাসের নিন্দা করলেন। কিন্তু হাসপাতালে হামলা ও নারী-শিশু হত্যার নিন্দা তিনি করলেন না। অথচ সেখানে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেটা শুধু গণহত্যা নয়, চরমতম যুদ্ধাপরাধ। যে যুদ্ধাপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছিলো। আমরা যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করেছি। একইভাবে এই অপরাধের জন্য লড়াই করতে হবে।’
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যায় শোকপ্রস্তাব করলেও বিএনপি টু শব্দও করেনি বলে অভিযোগ করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞের বাংলাদেশ শোক প্রকাশ করলেও বিএনপি টু শব্দও করেনি। আমরা এর নিন্দা জানাই। সারাবিশ্ব ফিলিস্তিনের পক্ষে, আর একা যুদ্ধরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে। সেই একই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যুদ্ধের সময় রাজাকারদের পক্ষে ছিল। সুতরাং বদলায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরিত্র। বাংলাদেশে গণতন্ত্র উদ্ধারের নাম বিএনপি একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এ হত্যাকে সমর্থন করে যাচ্ছে।’ ১৯৭৩ সালে ইয়াসির আরাফাতের ডাকে সাড়া দিয়ে জাসদের কয়েক হাজার তরুণকে ফিলিস্তিনে যুদ্ধের জন্য পাঠানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন জাসদ সভাপতি। সেখানে শতাধিক তরুণ শহীদ হন বলেও জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘গাজা এখন উন্মুক্ত কারাগার। তারা ৫৬ বছর ধরে উন্মুক্ত কারাগারে বসবাস করছে। ফিলিস্তিনে এখন পাখি শিকারের মতো করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, হাজার হাজার অসহায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, এই নিয়ে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে আফগানিস্তানকে ধ্বংস করেছে। সাদ্দাম হোসেনকে ধ্বংস করেছে। অস্ত্র ও সামরিক সহযোগিতা দিয়ে যুদ্ধকে উস্কে দিচ্ছে। একাত্তর সালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটা করেছিল। আমরা চাই, ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হোক। সারাবিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক। ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্রকে মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই স্থায়ী সমাধান হতে পারে।’
সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের চালানো নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে এবং এই হত্যাকাণ্ড বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মানবাধিকারের চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এই সংসদ ফিলিস্তিনে মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বের সকল বিবেকবান জনগণ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কার্যকরভাবে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।’