বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের সংহিসতার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দলটির সঙ্গে আলোচনা নাকচ করে দিয়েছেন। ওই সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের জানোয়ার অভিহিত করে তিনি বলেছেন, ‘জানোয়ারদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে, প্রশ্নই ওঠে না। দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কেমন বাংলাদেশ তারা চায়। উন্নত দেশ, নাকি ধ্বংসের দেশ?’
গতকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যখন সারা দেশে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি, আর তখন আমরা কী দেখলাম―কথা নাই বার্তা নাই নির্বাচন হতে দেবে না।
সংসদ নেতা বলেন, ‘দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন বাংলাদেশ তারা চায়? উন্নত দেশ, নাকি ধ্বংস দেশ? বিএনপি-জামায়াত শুধু ধ্বংসই করতে পারে। বাংলাদেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর যেন কেউ দেশকে নিয়ে খেলতে না পারে, দেশবাসীর কাছে সেই সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকদের যেভাবে মেরেছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। তারা তো বিএনপির কাজই করত। গাড়ি পুড়িয়েছে, তাদেরকে সহযোগিতা দেব? যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, তাদেরকে ধরিয়ে দিন। যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে সেই হাত পুড়িয়ে দিন। দেশবাসীকেই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এরা মুষ্টিমেয় লোক। উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক, মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকুক, সেটাই চাই।’
‘বারবার আমার ওপর আঘাত এসেছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো বারবার হামলা হচ্ছে। বিদেশে যাই, সেখানেও মারার চেষ্টা করছে। এটা সংসদকে জানিয়ে রাখলাম। দেশের জন্য কাজ করছি। দেশবাসীকে আহ্বান করব, জনগণ শক্তির উৎস, জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি। আমার শক্তি বাংলাদেশ, দেশের জনগণ। দেশের জন্য কাজ করি। কে কোন দল করে সেটা দেখি না। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। ৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। কেউ থামাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দেশের মানুষকে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আইনগতভাবে তারা বিরোধী দল নয়। অর্থাৎ বিএনপি বারবার মানুষকে পোড়ায়, সম্পদ ধ্বংস করে, আমরা দেশের উন্নতি করি, তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ২৮ তারিখেও তারা পুলিশকে হত্যা করেছে।’ একইভাবে ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচনের আগে ও পরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির চলমান আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা যখন আমরা করে যাচ্ছি তখন কী দেখলাম? কথা নেই, বার্তা নেই, নির্বাচন হতে দেবে না। আর আমাকে পদত্যাগ করাবে। ক্ষমতা থেকে হটাবে। ঘোষণা দিয়ে ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে তাণ্ডব করছে সারা বাংলাদেশে…। এই দৃশ্যগুলো সহ্য করা যায় না। সাংবাদিকরা কী অপরাধ করেছে? আর এরাও বিএনপিরই কাজ করত। তাদের যেভাবে মেরেছে! যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তার পাশে আছি। সাধ্যমতো সাহায্য করে যাচ্ছি। জিয়াউর রহমান তো আমার বাবা-মা, ভাই, বোন সব হত্যার সঙ্গে জড়িত। আর খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া তো আমাকে হত্যার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে।’
‘আমাকে বিদেশে হত্যার চেষ্টা হয়েছে’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বারবার আমার ওপর আঘাত হেনেছে। তার পরও আমি বেঁচে গেছি। এখনো বারবার আমার ওপর হামলা হচ্ছে। এমনকি দেশে না, বিদেশেও আমার ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি বিস্তারিত বলব না। শুধু এটুকুই জানিয়ে রাখলাম। আমি যখন বিদেশ যাই, সেখানেও কিলার হায়ার করে আমাকে মারার চেষ্টা…সে চেষ্টাও ওই খালেদা জিয়ার ছেলে যেটা লন্ডনে বসে আছে, সেসহ তাদের যারা সন্ত্রাসী তারাই…। তবে আমি কখনো এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না। জন্মালে তো মরতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস আছে এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশের উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছি। সারা বিশ্বে কভিড ভাইরাস ছিল। তখন আমরা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হই। মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি। মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। আমরা সেটা নামিয়ে এনেছিলাম ৫ শতাংশে। করোনার সময়েও আমরা বাজেট বাড়িয়েছি। জিডিপির আকার ৫০ কোটি ৩১ লক্ষ টাকায় উন্নীত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘জিডিপির তুলনায় সারা বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। বৈদেশিক মুদ্রা ছিল এক মিলিয়ন ডলারের নিচে। সেটা ৩৬ মিলিয়ন ডলারের বাড়িয়েছিলাম। হ্যাঁ, এখন ওঠানামা করেছে। আমাদের খাদ্যপণ্যসহ নানা জিনিস কিনতে হয়। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। অতি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি।’ এ সময় বিভিন্ন উন্নয়নসহ গ্রামীণ সড়ক, অবকাঠামোর কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।