অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীতে হঠাৎ বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি তার অবস্থান তুলে ধরে বলেছে, দলটি এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। কারা ঘটিয়েছে সেটা দেশের সচেতন মানুষ জানে। তারা শান্তিপূর্ণ পথে রয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, এ ঘটনা সরকারের এজেন্টদের নাশকতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে অভিজ্ঞতা, আপনারাও জানেন, সরকারের কিছু কিছু অংশ যারা বিভিন্নভাবে কাজ করে, কেউ কেউ এগুলোকে স্যাবোটাজ করার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটায়। এটাও আমরা অতীতে দেখেছি, এর আগেও এভাবে বিএনপিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপি এই রাজনীতি করে না।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১১টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, ভোটগ্রহণকে ঘিরেই এই নাশকতা। বাস পোড়ানোর ঘটনায় ১১টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া নাশকতার আরো চারটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ৫০০ জনকে, এর বেশির ভাগই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এর মধ্যে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ড দেওয়া হয়েছে ২৮ জনকে।
বিএনপিকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়েরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) যে ঘটনা ঘটেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। তীব্র ভাষায় এর নিন্দা করছি। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা সব সময় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করি। এগুলো কখন হয়, যখন দেশে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস থাকে না। আপনি একটা মিছিল করতে পারবেন না, কোথাও সভা করতে পারবেন না, এসব অনেক দিন ধরে হয়ে আসছে, যার ফলে অনেক সময় এই ধরনের যারা দুষ্কৃতকারী, তারা এই সুযোগগুলো নিয়ে এসব ঘটায়।’ দুষ্কৃতকারী যারাই হোক, তাদের বিচারের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের পর ফখরুল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ পথেই আছি, আমরা কোনো উসকানিতে পা দেব না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ করে মামলা দিচ্ছে। তারা শত্রু চিনতে পারছে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো সর্বহারা পার্টি নই। আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থা প্রকাশ্যে, সেটা গোপনে নয়। ফলে এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তা সবাই জানে। এখন বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করা উচিত হবে না।’
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেছেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী দুই বছর ধরে জেলে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। এ রকম একটা কঠিন সময়ে কিন্তু আমাদের ঐক্য অটুট আছে। এই ধরনের দলে যেটা হয় কেউ কেউ পদত্যাগ করে চলে যায়। এখনো দলের মধ্যে কোনো ভাগ হয়নি। আমাদের দল চলে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে। আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক প্রতি শনিবার হয়, যেটা আগে কম হতো। এই মিটিং করে আমরা সিদ্ধান্ত নিই।’ তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) অ্যাকটিভ আছেন মানসিকভাবে। রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রভাব নিয়ে আছেন। বেগম জিয়া কখনো চলে যাননি এবং যাবেন না। তাঁর (খালেদা জিয়া) যে অস্তিত্ব দেশের মানুষের মধ্যে এটা অত্যন্ত গভীরে। উনি রাজনীতিতে আছেন এবং থাকবেন। অবশ্যই উনি অ্যাকটিভ হবেন। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাহেব যে বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য অন্তরায়। আসলে প্রধান অন্তরায় তো তাঁরা। ১৯৭৫ সালে বাকশাল তৈরি করে গণতন্ত্রকে কবর তো দিয়েছিলেন তাঁরা। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল, সেই সংবিধান তাঁরাই পরিবর্তন করেছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, জরুরি অবস্থা, বাকশাল পর পর তিনটা করে মানুষের সব অধিকার তাঁরা কেড়ে নিয়েছেন। উনারা ক্ষমতায় আসার পর কী করলেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান ছিল, সেটা বাতিল করলেন, একেকটা আইন তৈরি করেছেন, সেগুলোর একটাও গণতন্ত্রের পক্ষের আইন নয়।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর কথিত ফোনালাপের অডিও সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি এটা ? শুনিওনি, জানিও না। এগুলোর পেছনে সরকারের হাত সব সময় থাকে, যারা এটাকে ম্যানিপুলেটেড করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার বললেন, এই কমিশন এত ভালো যে আমেরিকার তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এর চেয়ে হাস্যকর কথা একজন সিইসির কাছ থেকে আসতে পারে, এটা কল্পনাও করতে পারি না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁদের রাজনৈতিক এজেন্ডা এখন একটাই। সেটা হলো, জনগণের সরকার গঠন করার জন্য, জনগণের সংসদ গঠন করার জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন তৈরি করে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। এটা না হলে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিবকে রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়।