অনলাইন ডেস্ক:
মুজিববর্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপন করা সাধারণ প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতে সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। একই রাতে সংসদে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বাসে হঠাৎ আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি জড়িত বলে ইঙ্গিত করেছেন।
প্রস্তাবটি পাসের আগে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গ্রহণকালে সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণটি শোনানো হয়। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব এনেছিলেন। নোটিশ আকারে তাঁর প্রস্তাব উত্থাপনের পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রস্তাবটি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মোট ৭৯ জন সংসদ সদস্য ১৯ ঘণ্টা ৩ মিনিট আলোচনা করেছেন। গত রাতে সংসদ নেতার বক্তব্যের পর প্রস্তাবটি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ভোটে দিলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রীকে। প্রস্তাবটি পাসের সময় সংসদ ভবনে প্রেসিডেন্ট বক্সে উপস্থিত থেকে অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর আগে ৯ নভেম্বর মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি স্মারক বক্তব্য দেন।
বাসে আগুন দিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়
রাজধানীতে সম্প্রতি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপির জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে হঠাৎ অগ্নিসন্ত্রাসের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আপনি দেখেছেন মাননীয় স্পিকার, কোনো কথা নাই, বার্তা নাই, হঠাৎ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস। কেন? কী স্বার্থে? কিসের জন্য? নির্বাচন হয়…নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নামে অংশগ্রহণ করে। টাকা-পয়সা যা পায়, পকেটে নিয়ে থুয়ে দেয়। ইলেকশনের দিন ইলেকশনও করে না, এজেন্টও দেয় না, কিছুই করে না। মাঝপথে ইলেকশন বয়কটের নাম দিয়ে, এরপর বাসে আগুন দিয়ে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এটার উদ্দেশ্যটা কী?’
সংসদ নেতা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে। এই সংকটের মধ্যেও হঠাৎ বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য কী?’ তিনি আরো বলেন, ‘এই করোনার সময়েও যাতে অর্থনীতি সচল থাকে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিচ্ছি। এতে অসুবিধা কোথায়? তার পরও কেন অরাজকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে?’
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নই সরকারের মূল লক্ষ্য
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো—এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে।’
আলোচনায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার কর্মময় জীবন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা কিন্তু চট করে এক দিনে আসেনি। দীর্ঘদিন তাঁর সেই লালিত স্বপ্ন। সেটা তিনি নিজে বলেছেন। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এবং দেশীয়, আন্তর্জাতিক চক্র যখন তাঁর যাত্রাপথে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করল; দুর্ভিক্ষ হলো, এ দেশের মানুষ হত্যা করল, রাতের আঁধারে গণপরিষদ সদস্য, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হত্যা করা শুরু করল। এমনকি ঈদের নামাজে পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের হত্যা করা হলো। এরপর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর লক্ষ্য ছিল দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন।’
জাতির পিতার কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠনের কারণ ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটি বিপ্লবের পর অনেক কিছুই ঘটে। যাদের অর্থ আছে, লাঠি আছে, তারা সব কিছু দখলে নিতে চায়। তাই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কেউ যাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারেন, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক অধিকার যেন জনগণের কাছে পৌঁছায়, সে জন্য একটি সিস্টেম চালু করতে চেয়েছিলেন। কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি শেষ করতে পারেননি।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা প্রহসন করে নির্বাচনী সিস্টেমটা নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা সিস্টেমটা পুনরুদ্ধার করেছি।’
করোনায় যখন যা প্রয়োজন, সে ব্যবস্থা করছি
করোনা সংকটে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ, একদিকে করোনা সামলাচ্ছি। অপরদিকে অর্থনীতির গতি যাতে সচল থাকে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানে যা দরকার আমরা দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা যাতে সচল থাকে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আজকে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। টাকা-পয়সা দিয়ে ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা আমরা রেখে দিয়েছি; যেন যখনই চালু হবে আমরা এটা নিতে পারি। সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি। যখন যা প্রয়োজন, আমরা তার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তিও তুলে ধরেন।
‘প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু’
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু’ নামের একটি প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানান, ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এই প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্যাভিলিয়নে বসে বিশাল পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের পুরো ভাষণ প্রত্যক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্যাভিলিয়নটি ঘুরে দেখেন।’
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।