Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
বারাক ওবামা প্রকাশ্যেই ট্রাম্পের সমালোচনা করে যাচ্ছেন
--ফাইল ছবি

বারাক ওবামা প্রকাশ্যেই ট্রাম্পের সমালোচনা করে যাচ্ছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র শুধু সংবিধান দিয়ে সুরক্ষিত নয়, বরং আদবকেতা আর ভব্যতাও ওই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে অনেকখানি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ঢোকার পর এসব যেন উঠে যাচ্ছে। তিনি এসবের থোড়াই কেয়ার করছেন। আর চল ছিল, বর্তমান প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করবেন না সাবেকরা। সেটারও ব্যত্যয় ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সফল প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রকাশ্যেই ট্রাম্পের সমালোচনা করে যাচ্ছেন।

অবশ্য ওবামার আগে এ রকম সমালোচনা করার তালিকায় নাম পাওয়া যায় সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশেরও।

তবে ওবামার বিষয়টিই বেশি আলোচিত এবং প্রায় নিয়মিত। এটি এখন এমন একপর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে মার্কিন গণমাধ্যমে ওমাবার করা সমালোচনা এবং ট্রাম্পের টুইটারে এর জবাব দেওয়াকে ‘ধারাবাহিক দ্বৈরথের’ অভিধায় ভূষিত করেছে। এর সর্বশেষ প্রকাশ দেখা গেল গত বুধবার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশনের তৃতীত দিনে। এদিন ট্রাম্পকে সরাসরি ‘অনুপযুক্ত প্রেসিডেন্ট’ উল্লেখ করে তাঁর পূর্বসূরি বলেন, ‘ট্রাম্প আবার নির্বাচিত হলে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়বে।’

করোনাকালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই চার দিনের কনভেনশনের আয়োজন করা হয় অনলাইনে। এতে নেতাদের ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পান জো বাইডেন। আর তাঁর রানিংমেট হিসেবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত, অশ্বেতাঙ্গ প্রার্থী কমলা হ্যারিসন মনোনয়ন নিশ্চিত করে ইতিহাস গড়েন। কোনো অশ্বেতাঙ্গ প্রার্থীর এই পদে বড় দলের মনোনয়ন পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

ডেমোক্র্যাটিক দলের এ মুহূর্তের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অসাধারণ বাগ্মী বারাক ওবামার ভাষণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তাঁরই সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে ভোট চাওয়া। ভাষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাইডেনই দখল করেছিলেন। তার পরও তাঁর এই ভাষণ মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে প্রচার পাচ্ছে, সংবিধান নিয়ে দেওয়া সর্বোত্কৃষ্ট ভাষণগুলোর অন্যতম হিসেবে। এই ভাষণে ট্রাম্পকেও এক হাত নেন তিনি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এ পদের ‘উপযুক্ত নন’ বলে মন্তব্য করে ওবামা বলেন, মার্কিন গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে নভেম্বরের নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেই প্রয়োজন।

ট্রাম্পের সমালোচনা করে ওবামা বলেন, ‘কাজ করার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি তাঁর; ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জায়গা খোঁজা, নিজের এবং নিজের বন্ধুদের ছাড়া প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি কাউকে সাহায্য করেননি। প্রেসিডেন্টের কাজকে আরেকটি রিয়ালিটি শো বানিয়ে এবং একে ব্যবহার করে নিজের দিকে মনোযোগ টানা ছাড়া আর কোনো দিকে মনোযোগ দেননি প্রেসিডেন্ট।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের সাধারণত উত্তরসূরিদের নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা যায় না। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে একটি অংশ পর্যন্ত ওবামাও এই রীতি মেনে চলেছিলেন; তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে কয়েকবারই দায়িত্বরত প্রেসিডেন্টের কঠোর সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

অবশ্য পূর্বসূরিকে আক্রমণের ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে কখনোই তেমন দ্বিধান্বিত দেখা যায়নি। রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট প্রায়ই ওবামার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলতেও পিছ পা হননি। যদিও সেসব অভিযোগের পক্ষে কখনোই কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।

গত বুধবার ওবামার ভাষণের জবাব দিতেও ট্রাম্প খুব বেশি সময় নেননি। মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন যথারীতি টুইটারকে। ট্রাম্প টুইটে বলেন, ‘তিনি (ওবামা) আমার প্রচার শিবিরের পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছিলেন। ধরাও পড়েছেন।’ সাংবাদিকদের সামনে ওবামার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়েও তিনি একই ভাবে কথা বলেছেন, ‘ওবামা ভয়াবহ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর ব্যর্থতায় অতিষ্ঠ হয়েই জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছে।’

গত বুধবারের ভাষণে ওবামা আরো বলেন, ‘তিনি সে লোক হতে পারেন না, যাঁকে আমাদের দরকার। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কাজের জন্য যোগ্য নন, কেননা তিনি পারছেন না; আর তাঁর ব্যর্থতার পরিণতি ভয়াবহ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একজন প্রেসিডেন্ট প্রত্যাশা করি, যিনি আমাদের ৩৩ কোটি নাগরিকের সবার নিরাপত্তা ও কল্যাণের দায়িত্ব অনুভব করবেন। এমন একজন প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশা করি, যিনি হবেন গণতন্ত্রের রক্ষক। ট্রাম্প এসব পরীক্ষায় ফেল করেছেন।’

ওবামার আগের দিন প্রচার করা হয় আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভাষণ। তাঁর কণ্ঠেও একই সমালোচনা শোনা গেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের সময় সব কিছুর কেন্দ্রে থাকা উচিত ছিল ওভাল অফিসের। কিন্তু এখন এই অফিস ঝড়ের কেন্দ্র। নৈরাজ্য ছাড়া ওখানে আর কিছু নেই। শুধু একটি বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি—ট্রাম্পের দায়িত্ব অস্বীকার করা, অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানো।’

কনভেনশনে ওবামার আগে প্রচার করা হয় ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে অল্পের জন্য পরাজয় স্বীকার করা প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য। সাবেক ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বলেন, ‘আমরা আরেকটি যেনতেন নির্বাচন হতে দিতে পারি না। গণতন্ত্রের স্বার্থে আগের নির্বাচনের ফল মেনে নিলেও গণতন্ত্রের স্বার্থেই এবার আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সূত্র : বিবিসি, এএফপি, সিএনএন।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply