Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

বাতজ্বর

  বাতজ্বর বা রিউমাটিক ফিভার অনাক্রম্যতন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াজনিত একটি জটিলতা। সাধারণত স্ট্রেপ্টোকক্কাস ঘটিত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ১৪ থেকে ২৮ দিন পরে তৈরি হওয়া এই মাত্রাতিরিক্ত সংবেদনশীলতা ত্বকে, হৃদপিন্ডে, হাড়ের সন্ধিস্থলে এবং মস্তিষ্কে গুরুত্বর অসুস্থতার কারণ ঘটাতে পারে। প্রধানত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ : সাধারণত গিরায় গিরায় কিংবা হাড়ে ব্যথা হলে সেটা বাতজ্বরের লক্ষণ হিসাবে মনে করা হলেও  সবক্ষেত্রেই তা ঠিক নয়। রোগীর অতীত ইতিহাস, উপসর্গ এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা হয়। বাতজ্বরের কিছু মুখ্য ও কিছু গৌণ লক্ষণ রয়েছে। দুটি মুখ্য লক্ষণ কিংবা একটি মুখ্য লক্ষণের সঙ্গে দুটি গৌণ লক্ষণ নিশ্চিতভাবে মিলে গেলে বাতজ্বর নির্ণয় করা যায়। তার সঙ্গে বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত সংক্রমণের ইতিহাস বা প্রমাণও থাকতে হবে। মুখ্য লক্ষণের মাঝে আছে হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ যার ফলে জ্বর, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া গিরায় ব্যথা হয় যা সাধারণত শরীরের বড় বড় সন্ধিতে আক্রমণ করে এবং একটি অস্থিসন্ধি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার পর অন্য একটি অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হয়। বুকে ও পিঠে লাল বর্ণের চাকা, ত্বকের নিচে শিমের বিচির মতো ছোট আকৃতির শক্ত ও ব্যথাযুক্ত দানার উপস্থিতি এবং হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশের নিয়ন্ত্রণহীন কাঁপুনিও মুখ্য লক্ষণের মাঝে রয়েছে। গৌণ লক্ষণের মাঝে রয়েছে স্বল্পমাত্রার জ্বর, রক্তের ইএসআর ও নিউট্রোফিল বেড়ে যাওয়া, এএসও টাইটার বৃদ্ধি প্রভৃতি।

জটিলতা : বাতজ্বরের ফলে কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন- বাতজ্বরের ফলে বাতজনিত হৃদরোগ হয় যা থেকে হৃৎপিণ্ডের কপাটিকার সমস্যাসহ স্থায়ী রোগ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন গিরায় দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থাকে এবং অস্থিসন্ধি নষ্টও হয়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধ : অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারীদের মধ্যেই এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। তাই এরকম পরিবেশ এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে রাতে শোয়ার আগে ও সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। নিয়মিত পরিমিত পানি পান করা উচিত। গলায় সংক্রমণ বা গলাব্যথা হলে অবহেলা না করে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা করলে বাতজ্বর হওয়ার সম্ভাবনা কম হয় বা একেবারেই থাকে না। তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ না পাওয়া গেলে বাসায় হালকা গরম পানি ও লবণ দিয়ে কমপক্ষে দিনে তিনবার পাঁচ মিনিট সময় ধরে গরগরা করা যায়। মেয়েদের বাতজ্বর হলে বিয়ে বা সন্তান ধারণে কোন অসুবিধা নেই। গর্ভধারণ করলেও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। এতে সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে বাতজ্বরজনিত হৃদ্‌রোগ গুরুতর হলে সন্তান নেওয়া মায়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই বাতজ্বরজনিত হৃদ্‌রোগীদের গর্ভধারণের আগে বাতজ্বরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা : চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত বিভিন্ন ওষুধ খেতে হয়। পাশাপাশি ব্যথা এবং রোগের অন্যান্য উপসর্গ ভালো না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে প্রয়োজনে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। এছাড়া পেনিসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন সেবনের প্রয়োজন পড়ে। উপসর্গ ভালো হয়ে গেলে বাতজ্বরের প্রতিষেধক চিকিৎসা বন্ধ করা সঠিক নয়। বাতজ্বর একবার হলে বারবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বাতজ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতে নিয়মিত ও ক্রমাগত ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, যাতে পুনরায় বাতজ্বর না হয়। মনে রাখতে হবে যে এই ওষুধ গ্রহণ বাতজ্বরের আগে আক্রমণের জন্য নয়। এটি ভবিষ্যতে বাতজ্বর না হওয়ার জন্য কাজ করে।

ডা. হিমেল ঘোষ

এমবিবিএস(ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস(স্বাস্থ্য),

মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply