গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
তরুণদের কর্মসংস্থান, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বাড়াতে জীবনমুখি নানা প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাউবি ও ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক প্রতিনিধি দলের সাথে একটি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাউবির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ড. মহা. শফিকুল আলম এবং ইউনিসেফের পক্ষে ছিলেন এডুকেশন চিফ দীপা শংকর, এডুকেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন, এডুকেশন ন্যাশনাল কনসালটেন্ট দিদারুল আনাম চৌধুরী, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ শামীমা সিদ্দিকী, শিক্ষা অফিসার রুবাইয়া মনজুর।
বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উঠে আসে বাউবির শিক্ষার্থী- শিক্ষাক্রমের মৌলিক দর্শন এবং ইউনিসেফের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সহযোগিতায় খুব শিগগির দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছরের যুবকদের অনলাইন এ প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত করা হবে। এ সম্পর্কিত কোর্স ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টে বাউবি ও ইউনিসেফের একটি প্রতিনিধি দল কাজ করবে বলে বৈঠকে জানা যায়।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘ ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক প্রতিনিধি দলের সাথে আমরা আজ যে কারণে বৈঠকে বসেছি তা খুবই প্রাসঙ্গিক, যৌক্তিক ও সময়োপযোগি। কারণ, বাউবি একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে শিক্ষাবঞ্চিত, দুর্গম ও প্রত্যান্ত অঞ্চলবাসী, বিভিন্ন পেশাজীবী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি, অবহেলিত, সব বয়সের মানুষ, শারীরিক প্রতিবন্ধী, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষের জন্য ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র, ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ১,৫৪৫টি সক্রিয় স্টাডি সেন্টারের মাধ্যমে দেশজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে আছে বাউবির শিক্ষাব্যবস্থা।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি দলকে আরো জানাতে চাই যে, ‘দক্ষ জনশক্তি ও স্বনির্ভর দেশ গড়তে বাউবিতে লাইভস্টক এন্ড পোলট্রি, পিসিকালচার এন্ড ফিসারিজ, ডিপ্লোমা ইন ইয়্যুথ ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড এপ্লিকেশন থেকে শুরু করে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক, স্নাতকোত্বর এমনকি এমফিল পিএইচডি’র শিক্ষাক্রম চলমান। এছাড়াও দেশের অর্থনীতির চাকা সচলকারী প্রবাসে অবস্থানরত বাঙালি রেমিটেন্স যোদ্ধাদের আত্ম মর্যাদাশীল, কর্ম ও ভাষাগত দক্ষতা বাড়াতে দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, ইতালি- এই ৬টি দেশে বাউবির স্টাডি সেন্টারে বিভিন্ন প্রোগামে শিক্ষা গ্রহণ করছে ১,২৮৫ শিক্ষার্থী। চাইনিজ, এ্যারাবিক, ইংরেজি ভাষার জন্য আমাদের সার্টিফিকেট কোর্স চালু রয়েছে।’
ড. ওবায়দুল ইসলাম বাউবির মৌলিক, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাধারা ও ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে ইউনিসেফের প্রতিনিধি দলকে অবহিত করে আরো বলেন, অনলাইন ও ই-প্লাটফর্মের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, ফল প্রকাশ ও শিক্ষকদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা সবই জায়গায় বসে সম্ভব হচ্ছে। বাউবির প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষাসেবায় যুক্ত রয়েছে ই-বুক, বাউবি ওপেন টিভি, ওয়েব টিভি, ওয়েব রেডিও, বাউবি টিউব, বাউবি অ্যাপস, মোবাইল আ্যাপস, টুইটার, ফেসবুক, ইমেইল, ই-লার্নিং, এলএমএস এবং অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম। বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে বাউবির প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষাধারা। আজ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সব কিছুই বাউবির শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োগ হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইউনিসেফের পক্ষ থেকে দীপা শংকর বলেন- দক্ষিণ এশিয়ায় বাউবি অন্যতম বৃহৎ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমি আশা করছি, দুটি প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সহযোগিতায় উপকৃত হবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তরুণরা।
পরে, সভায় বাউবি ও ইউনিসেফ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের যুবকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ যুব সমাজ গড়ে তুলতে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে। বাউবি এবং ইউনিসেফের প্রতিনিধিদের দিয়ে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি ওয়ার্কিং টিম গঠন করা হবে। এবিষয়ে ইউনিসেফ, বাংলাদেশ সকল প্রকার সহযোগীতা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত তিন দশকে বাউবি ও ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক এটাই প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।