বাংলাদেশের সঙ্গে জোরালো অংশীদারি আরো গভীর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকা সফর শুরু করার আগে এমন আগ্রহের কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী মঙ্গলবার চার দিনের সফরে আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়ার বাংলাদেশে আসার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অঞ্জলি কৌর আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে আসছেন।
আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছবি প্রকাশ করে ওই বৈঠকের কথা নিজেই জানিয়েছেন মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি। তিনি লিখেছেন, ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রমবিষয়ক ন্যায্য চর্চা ও মানবিক সহযোগিতার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানকে ধন্যবাদ।
আমি আমাদের জোরালো অংশীদারি আরো গভীর করতে উন্মুখ হয়ে আছি।’
এর আগে গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারতের রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধুর সঙ্গে বৈঠক করেন আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুও উপস্থিত ছিলেন। উজরা জেয়া গত বৃহস্পতিবার টুইট বার্তায় সেই বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুবিধার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বন্ধুত্ব জোরদার করছি। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধু ও আমি আরো উন্মুক্ত, অবাধ, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিককে এগিয়ে আমাদের পারস্পরিক প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়া বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই ভিসানীতির পর দেশটি থেকে উচ্চ পর্যায়ের এটিই প্রথম সফর। এ সফর নিয়ে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে নানা চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
তবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধিদল শুধু নির্বাচন নিয়েই কথা বলতে আসছে—এ ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই। আমাদের মধ্যে আলোচনার যে কাঠামোগুলো আছে তারই ধারাবাহিকতা এই সফর।’পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে এবং এর মধ্যে নির্বাচন আসতে পারে। নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং আমি এটি বাদ দিচ্ছি না। কিন্তু এটি নির্বাচনকেন্দ্রিক সফর—এটি ভাবাও ঠিক হবে না।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরেও যাবে। বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
এদিকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর যে ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে, এর প্রভাব নিয়ে ভারতের বিশ্লেষকরা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়েছেন। গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে দেশটির একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিসহ এ সম্পর্কিত প্রসঙ্গে আলোচনা করবেন। বৈঠকের পর কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কিছু বলেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট। আবার এই অঞ্চলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জনের বড় অংশীদার।