খেলা ডেস্ক:
অ্যারিয়েল কোলম্যান সেই ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশে। প্রথম এসেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানির সহকারী হিসেবে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ভক্তদের উন্মাদনা তাই তাঁর কাছে নতুন নয়। তবু এবার যেন উন্মাদনা অতীত ছাপিয়ে গেছে।
কোলম্যানের এমনটাই মনে হচ্ছে, ‘এবার মাতামাতিটা একটু বেশিই হচ্ছে। অনুমান করতে পারি মেসিই এর কারণ। ’
এবার উন্মাদনায় বাড়তি যা যোগ হয়েছে তা হলো বাংলাদেশের এই মাতামাতির খবর আর্জেন্টাইনদের কাছেও পৌঁছে গেছে। আর্জেন্টিনা পেশাদার লিগের অফিশিয়াল যে টুইটার অ্যাকাউন্টে মেসির হাতে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ধরিয়ে যে কোলাজ উপহার দিয়েছে তা এ দেশের ভক্তদেরও মন কেড়ে নিয়েছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচের দিন বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা আর্জেন্টিনার জার্সি পরেই চলে এসেছিলেন খবর পড়তে, সেটা আর্জেন্টাইনদের জন্য ছিল ঘোর বিস্ময়। দেশটির জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ফলাও করেই ছেপেছে সেই খবর। ওদিকে ফিফা আপলোড করে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় পর্দায় আর্জেন্টিনার জয় দেখে হাজারো শিক্ষার্থীর উল্লাসের ছবি। মেক্সিকো ম্যাচে জয়ের পর দেশজুড়ে আর্জেন্টাইন ভক্তদের যে মাতামাতি সেটা তুঙ্গে উঠেছিল পরশু রাতে পোল্যান্ডকে হারিয়ে আলবিসেলেস্তের শেষ ষোলোয় পা রাখাতে। এদিনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহরের নানা জায়গা এবং দেশের নানা প্রান্তে আকাশি-সাদা ভক্তরা বড় পর্দায় খেলা দেখে উল্লাস করেছেন। অলিতেগলিতে রাতের আঁধার প্রকম্পিত হয়েছে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে।
প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের পর বাংলাদেশের বিশাল আর্জেন্টাইন সমর্থক গোষ্ঠীর স্নায়ুর বড় পরীক্ষা নিয়ে গেছে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে মেসিদের পরের দুটি ম্যাচ। সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে পরশু স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ মেসিরা হেসেছেন নিজেদের ফিরে পাওয়ার হাসি। সেই হাসি ছড়িয়ে গেছে এই হাজার মাইল দূরের বাংলাদেশেও।
গতকাল সকালেই আর্জেন্টিনার স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেল হুনিন টিভি লাইভ অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় শেখ জামাল ক্লাবের ট্রেনার হিসেবে কর্মরত কোলম্যানের। স্প্যানিশে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারের সারমর্ম বলছিলেন কোলম্যান, ‘আসলে আর্জেন্টিনার মানুষের কাছে বাংলাদেশের এই মাতামাতি একটা বিস্ময়। সেখানে অনেকে জানতও না এই দেশটা কোথায়। এখন সবাই জানতে চাইছে, আমাকে আসলে সেটাই বলতে হয়েছে, বাংলাদেশকে নিয়ে যা যা জানানো যায় তাদের। ’
কোলম্যান বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ তো আমার দ্বিতীয় বাড়ি। এই যে বিশ্বকাপের সময়টায় এখানে পড়ে আছি, একটুও একা লাগছে না, মনেই হচ্ছে না স্বজনদের কাছে নেই। ’ কোলম্যান নিজে অবশ্য টিএসসি বা বিভিন্ন আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জমায়েতে গিয়ে খেলা দেখছেন না। ঘরে বসে মাতের (আর্জেন্টিনার বিশেষ ধরনের চা) পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে টিভি পর্দাতেই রেখেছেন চোখ, ‘আসলে ম্যাচগুলোতে এত মন পড়ে থাকে যে কোথায় কী হচ্ছে, ভাবতে পারি না। আমি চাই, নিরিবিলিতে শুধু খেলাগুলো উপভোগ করতে। আর গত দুটি ম্যাচে এমন দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে বাইরে গিয়ে খেলার কথা ভাবতেই পারিনি। ’ কোলম্যানও জানেন বাংলাদেশের এই আর্জেন্টিনা প্রেম মূলত ’৮৬-এর ম্যারাডোনা থেকে উৎসারিত। তা আজ লিওনেল মেসিতে এসে মিশেছে। আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরের হাতে আরেকবার সোনালি ট্রফি উঠলে এই উন্মাদনা-ভালোবাসা কতদূর যাবে কে জানে?