অনলাইন ডেস্কঃ
পশ্চিমাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ লাগার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য তারা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন।
কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাশেষে গতকাল রোববার রাতে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে।
এসব কারণে আমাদের দেশেও পুনরায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি সংক্রমণ হলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পূর্ণ প্রস্তুতি রাখতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে কারিগরি পরামর্শ কমিটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও ‘স্বস্তির’ জায়গায় পৌঁছেনি। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিবেদিত কিছু হাসপাতালে শয্যা খালি থাকছে। অন্যদিকে অন্য রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা রোজ বাড়ছে।
এমতাবস্থায় অন্যান্য রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, অর্থ সাশ্রয় করতে কোভিড-১৯ হাসপাতালের অব্যবহৃত শয্যা সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে দেশে এখনও আইসোলেশন কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। এ ক্ষেত্রে কমিটির পরামর্শ হচ্ছে- শয্যা সংখ্যা সংকোচন করা হলেও পুরোপুরি বন্ধ না করা। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যাতে পুনরায় এসব আইসোলেশন সেন্টার ব্যবহার করা যায়, সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এখনই করণীয় বিষয় ঠিক করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয়ের জন্য আরও বেশি পরিমাণে পরীক্ষা করার তাগিদ দিয়েছে।
এ অবস্থায় কোভিড ১৯-এর নমুনা পরীক্ষার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলে কমিটি। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে সংক্রমিত ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইসোলেশন নিশ্চিত করার কথা বলেছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে আসছে জানিয়ে ভ্রমণসংক্রান্ত পরামর্শ ও নিয়ম জারি করার তাগিদ দিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে ঢোকার স্থানগুলোতে কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
বিদেশ ফেরতদের স্ক্রিনিং, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে করোনাট্রেসার অ্যাপ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পর সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ায় বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। বাংলাদেশে এখন সংক্রমণের চিত্র প্রায় স্থিতিশীল হলেও ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ লাগার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আসছে শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। রোববার পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৬ জনে। মারা গেছে ৪ হাজার ৯৩৯ জন।
শুরুতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর কড়াকড়ি ও জনসচেতনতা দুটোই দেখা গিয়েছিল। কিন্তু যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই মানুষের উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। গণপরিবহনগুলোতে ঠাসাঠাসি করে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে লোকজনকে। টেস্টের সংখ্যাও কমে গেছে।