মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও গ্রামের মোঃ আবেদ মিয়ার মেয়ে আনিকা আক্তার রাইসা (১০) এক্সিডেন্টে ডান পায়ের হাটুর উপর কাটা পা নিয়ে দু:সহ, বীভৎস জীবন যাপন করছে। তার জীবনের ভবিষ্যৎ যেন ঘোর অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে পূর্বদিক থেকে আসা মিনি ট্রাক পরপর দু’বার ডান পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চললে তার জীবন মৃত্যুঝুঁকিতে পরিণত হয়। দীর্ঘ ৩ মাস চিকিৎসায় বাঁচানো গেল না পা, কেটে ফেলা হলো পায়ের হাঁটুর উপর পর্যন্ত। বর্তমানে মেয়েটির জীবন চারদেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ, জরুরি শৌচাগার করাচ্ছেন মা-বাবা।
বাবা একসময় রিক্সা চালিয়ে আহার যোগালেও এখন কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন, মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে আহার যোগাচ্ছেন পরিবারের। টানাপোড়েনের এই পরিবারে দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ে আনিকা। সে সবার ছোট। ছোট্ট একটি ক্ষুদ্র ঘরে কোনমতে বসবাস করছেন তারা কিন্তু একটি অ্যাক্সিডেন্ট তাদের পরিবারকে করে দিয়েছে নিঃস্ব। শেষ সম্বল ভিটেমাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করতে গিয়ে আবেদ মিয়া আজ ঋণের বোঁঝা নিয়ে ঘুরছেন দিকবিদিক।
ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই গাড়ী চালক নজরুল ইসলাম (৩০) বিদেশে পাড়ি জমান।গাড়ির মালিক আমির হোসেন (৩০), ফারুক হোসেন (২৮) সহ প্রভাবশালী এই পরিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় সহযোগিতার হাত পর্যন্ত বাড়ায়নি। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে সালিশ বৈঠকের ডাক দিলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এই অভিযোগে ভুক্তভোগীর পিতা মোঃ আবেদ মিয়া ১০/০৮/২০১৯ সালে জুড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩, তা: ৬/১১/১৯ ইং, জি আর মামলা নং ১১৩/১৯,ধারা: ৩৩৮ (কি) দঃবিঃ।
মামলা সুত্রে জানা যায়,গত ১৬/০৪/১৯ ইং তারিখে বেলাগাঁও সরকারী প্রাইমারি স্কুল থেকে বাড়ি আসার পথে পূর্ব দিক থেকে আসা মিনিট্রাক যার নাম্বার (আর-৮৯৬৬),আনিকা আক্তার রাইসা কে সজোরে ধাক্কা মারলে তার ডান পায়ের হাঁটুর উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে যায়। এতে হাড্ডি সম্পূর্ণ ভাঙ্গিয়া চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। কয়েকজন গাড়ির গতিরোধ করলে গাড়ির চালক ব্যাক গিয়ারে পিছনের দিকে নিলে আবারও গাড়ির চাকা ডান পায়ের নিচের অংশে চালালে হাড্ডি ভেঙ্গে যায়। এমতাবস্থায় গাড়ির চালক নজরুল ইসলাম (৩০),পিতা মৃত আজেবর মিয়া,সাং- মানিকসিংহ ও গাড়ির মালিক আমির হোসেন, পিতা মকবুল আলী,সাং- বেলাগাঁও, ফারুক আহমদ, পিতা মকবুল আলী,সাং- বেলাগাঁও,সর্ব ডাকঘর ও থানা: জুড়ি, জেলা: মৌলভীবাজার অবস্থা বেগতিক দেখে আপোষ মীমাংসার কথা বলে কৌশলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গাড়ি চালকের সরকার অনুমোদিত কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। পরিবার তাৎক্ষণিক মেয়েকে সিলেট জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন, পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মেয়েটির অবস্থার অবনতি দেখায় তাকে রেফার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা গ্রহণের পর সর্বশেষ ডাক্তাররা তার অবস্থা গুরুতর থাকায় ডান পায়ের হাঁটুর উপর কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। মেয়়েকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তার ডান পাশের হাঁটুর উপর পর্যন্ত কেটে ফেলতে বাধ্য হয় পরিবার। চিকিৎসা শেষে ২নং ও ৩নং বিবাদীর বাড়িতে গিয়ে সালিশ বৈঠকের কথা বলে। তখন বিবাদীরা কিসের বৈঠক বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দিয়ে তাড়াইয়া দেয়। বিবাদীগণ হুমকি প্রদর্শন করে বলে মামলা মোকদ্দমা করিলে মেয়ের পা গিয়েছে তোমারও প্রাণ যাবে। মেয়েটির পিতা আবেদ মিয়া ১০/০৮/২০১৯ তারিখে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে বিবাদীগণ প্রভাবশালী থাকায় মামলা না নেয়ায় মাননীয় আদালতে মামলা করেন। মাননীয় আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করিয়া জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেন। বর্তমানে বিবাদীগণ জামিনে রয়েছে।