এম আর অভি, বরগুনা: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির পূর্ণাঙ্গ রায়ে ন্যায় বিচার পেয়েছেন এমনটি দাবী করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ । আমি আমার পুত্র হত্যার বিচার পেয়েছি , আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি, আলোচিত এই হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিরব-নিস্তব্ধ আদালত প্রাঙ্গণের বাতাস কিছুক্ষণের জন্য কান্নায় ভারি হয়ে যায়। সুনসান পরিবেশে আদালতে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে বিচার এজলাসে ওঠেন। দুপুর পৌনে ২ টায় জড়াজির্ণ আদালতে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো.আছাদুজ্জামান আলোচিত এই হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষনা করেন।
এ হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ৯ আসামি ও উভয়পক্ষের আইনজীবিদের উপস্থিতিতে আদালতে এ রায়ের পর্যবেক্ষনে বিচারক একটি কথাই বলেছেন যে,এই হামলা মধ্য যুগীয় পৈচাশিক বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এ মামলার রায় এর বিশেষ বিশেষ দিক আদালতে পড়ে শোনানো হয়। এ হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত প্রাপ্তবয়স্ক অন্যতম আসামী মুছা বন্ড (২২) অনু-উপস্থিতিতে এ বিচারকার্য সম্পন্ন হয়।
রিফাত হত্যা মামলায় মৃত্যদন্ড প্রাপ্তরা হলেন ১.রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী, ২.আল-কাইউম ওরফ্ েরাব্বি আকন, ৩.মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৪.রেজওয়ান আলী খান হ্রদয় ওরফে টিকটক হ্রদয় ৫.মো. হাসান,৬ ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ।
রিফাত হত্যা মামলায় খালাস প্রাপ্তরা হলেন- রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন ও মুছা। এদের মধ্যে আসামি মুছা বন্ড (২২) পলাতক রয়েছে। তবে এই হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষনার পূর্ব মূহূর্তে আদালতে আসামীরা স্বাভাবিক ছিলেন। কিন্তু রায় ঘোষনার পরপর আসামীদের কেউ কেউ আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
এ রায়ে বরগুনার সুশিল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা এ রায়কে যুগান্তকারী রায় বলে অভিহিত করেছেন।এ দিকে এ রায়কে ঘিরে সকাল থেকে আসামীদের স্বজনেরা ও হাজার হাজার উৎসুক জনতা আদালত প্রাঙ্গনে ভীর করতে থাকে। তারা সাংবাদিকদের বলেন, কঠোর বিচার হওয়ায় সমাজে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। অপরাধীরা বুজবে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না।
অপরদিকে আসামী পক্ষ এ রায়ে অ-সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায় প্রত্যাখান করে আল-কাইউম ওরফ্ েরাব্বি আকন, এর স্বজনেরা আদালত প্রাঙ্গনে কান্নায় ভেঙ্গে পরে । নিরব-নিস্তব্ধ আদালত প্রাঙ্গণের বাতাস কিছুক্ষণের স্বজনেরা আহাজারিতে ভারি হয়ে যায়। এ রায় তাদের ন্যায় হয়নি এমনটি দাবী করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাড.গোলাম মোস্তফা কাদের প্রতিবেদকে জানান, দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। দুপুর পৌনে ২ টায় জড়াজির্ণ আদালতে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আলোচিত এই হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষনা করেছেন। এ মামলার রায় এর বিশেষ বিশেষ দিক আদালতে পড়ে শোনানো হয় এমনটি নিশ্চিত করেছেন।
বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম বলেন, আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশ নিছিদ্র নিরাপত্তা দেয় । এরই মধ্যে রায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গনে ২শ৫০জন পুলিশ ছয় স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে।
রাষ্ট্র পক্ষের পিপি এ্যাড ভূবন চন্দ্র হালদার জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির পূর্ণাঙ্গ রায় হয়েছে আজ। এজাহারভূক্ত অন্যতম আসামী মুছা বন্ড (২২) এর অনু-উপস্থিতিতেই এ হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় হয়েছে।
গত বছরের (২৬ জুন) বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে নয়ন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত করে। গুরুতর আহত রিফাত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই দিনই মারা যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজ বুকে ভাইরাল হলে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়। সদর থানার ২ কিলো মিটারের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকারের ভিতে কুঠার আঘাত করে। পরে সমালোচনার মুখে স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। এ ঘটনায় ঔই দিন কোন মামলা না হলেও নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ পরের দিন ২৭জুন বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আলোচিত এই হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর বিচারক এ রায়ের দিন ধার্য করেন।