অনলাইন ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে পুনরুল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি জিয়ার আমলে কত মানুষকে কারাগারে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে, তার রেকর্ড খুঁজে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরো বলেন,
মিডিয়ায় কী লেখা হলো আর টেলিভিশনের টক শোতে কী বলা হলো, তা দেখে তিনি দেশ পরিচালনা করেন না, দেশ পরিচালনা করেন অন্তর থেকে।
দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্র্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কমকাণ্ডের কথা এবং বিএনপি আমলের ব্যর্থতা তুলে ধরেন। কঠোর সমালোচনা করেন জিয়াউর রহমানের। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের লাশের নামে চট্টগ্রাম থেকে একটি বাক্স সাজিয়ে-গুজিয়ে আনা হয়েছিল। ওই বাক্সে লাশ রয়েছে কি না জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা মীর শওকত আলী ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে বলেছিলেন, লাশ কোথায় পাব?
‘সবাইকে টিকা দেওয়া হবে, কোনো সমস্যা হবে না’
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাই যাতে টিকা পায় আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। ভ্যাকসিনের কোনো সমস্যা নেই। ২৪ কোটি ডোজ টিকা আমরা কিনব। ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের দেশে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য চুক্তি হয়েছে। সেখানেও ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হবে।
‘দেশ পরিচালনা করি অন্তর দিয়ে’
জিয়াউর রহমানের আমলে কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে, রেকর্ড থেকে তা খুঁজে বের করতে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিডিয়াতে কী লিখল, আর টক শোতে কী বলল, ওসব নিয়ে আমি দেশ পরিচালনা করি না, আমি দেশ পরিচালনা করি অন্তর থেকে। কে কী বলব তা শুনে হতাশ বা উৎসাহিত হওয়া আমার সাজে না।
তিনি বলেন, আমাদের মানুষের একটা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে, কথায় কথায় হতাশ হওয়া। আর যতই কাজ করি তারপরও বলবে এটা হলো না কেন, ওটা হলো না কেন? আমি তাদের একটু বলব; এটা না বলে আগে কী ছিল আর কী আছে, সেটা দেখলেই তো হয়ে যায়।
‘জিয়ার আমলে কতজনকে ফাঁসি, খুঁজে বের করুন’
সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, জিয়ার আমলে প্রত্যেকটা কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে, তার রেকর্ড তো থেকে যায়। সেগুলো একটু খুঁজে বের করে দেখেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের সংসদ সদস্যদের এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর বহু সৈনিক-কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষকে সে সময় হত্যা করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একেক রাতে ফাঁসি দিতে দিতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল, এখনো এ রকম লোক আছে। তিনি আরো বলেন, তাদের (বিএনপি) কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। এদের কাছে জ্ঞানের কথা, আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়। অথচ আমি আমার মা-বাবা হত্যার জন্য মামলা করতে পারিনি। আমার কোনো অধিকার ছিল না।
‘বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াই জড়িত’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ’৭৫-এর হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মামলায় আমি তাঁকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। তখনকার হোম সেক্রেটারি রেজাউল হায়াত বললেন, মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। আমার মনে হয় নামটা থাকা উচিত ছিল। জিয়া যে ষড়যন্ত্রে জড়িত, সেটা ফারুক-রশিদ নিজেরা বিবিসির ইন্টারভিউয়ে বলেছে। অ্যান্থনি মাসক্যারেনহাসের বইতে আছে, লরেন্স লিফশুলজের বইতে আছে। কিভাবে অস্বীকার করবে?’
এ সময় প্রধানমন্ত্র্রী প্রশ্ন তোলেন, তাই যদি না হবে তাহলে স্বাধীনতার পর যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল তাদের সে (জিয়া) ছেড়ে দিল কেন? এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের সাত খুনের আসামিকেও মুক্ত করে দিল। জিয়া সেই সব খুনিকে নিয়েই পরে দল করল।
‘সত্যিই ইতিহাস ফিরে আসে’
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিই ইতিহাস ফিরে আসে। জাতির পিতার নাম একদিন মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হয়েছিল, এমনকি ৭ মার্চের ভাষণটি পর্যন্ত বাজাতে দেওয়া হতো না। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ যখন সারা দেশে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছিল, চট্টগ্রামেও ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছিল। জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তানি সেনাদের হয়ে যারা ব্যারিকেড দিয়েছিল (মুক্তিযোদ্ধা) তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। পাকিস্তানের সেনাদের পক্ষে সে গেল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। সেখানে পাবলিক ঘেরাও করে তাকে আটকাল।
‘গৃহহীনদের দেওয়া ঘরে ৯ জায়গায় দুর্নীতি পাওয়া গেছে’
মুজিবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেওয়া ঘর নিয়ে দুর্নীতি বা অনিয়মের তদন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেন বন্ধ করেছে, সেই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের তো তদন্ত বন্ধ করার কথা না। তাদের তো তদন্ত চালু রাখতে হবে, তদন্ত করে দেখতে হবে। গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘর যারা ভাঙল, তারা কারা? তাদের উদ্দেশ্য কী?
১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের ঘটনা নিয়ে একজন এমপি প্রশ্ন তুলেছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা তদন্ত করেছি। দেখা গেছে, ৯টি জায়গায় দুর্নীতি পাওয়া গেছে, আর ১০-১২টি জায়গায় অতিবৃষ্টির কারণে মাটি ধসে ঘর পড়ে গেছে। ৩০০ জায়গার প্রতিটি ঘরের ছবি আমার কাছে আছে। তদন্ত করে দেখা গেছে, সেখানে দরজা-জানালার ওপর হাতুড়ির আঘাত। ফ্লোর খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে। পিলার ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা তো দুর্নীতির জন্য হয়নি। এটা কারা করল? তদন্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
স্পিকার ড. শিরীর শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের অনুপস্থিতিতে উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের সমাপনী বক্তব্য দেন। এরপর স্পিকার সংসদ অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে শোনান।