অনলাইন ডেস্কঃ
বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল রবিবার রাজধানীতে এক আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পেছনে আসল খলনায়ক ছিল জিয়াউর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন ‘খালেদা জিয়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় এবং তার স্বামী জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান শুধু জাতির পিতা হত্যার সঙ্গেই নয়, জাতীয় চার নেতা এবং একের পর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাকর্মীদের হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিল। খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় আসার পরে ঠিক একই কাজ করেছিল।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত এই আলোচনাসভা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যেমন সেই আবদুল আলিম থেকে শুরু করে, মাওলানা মান্নান থেকে শুরু করে, শাহ আজিজ থেকে শুরু করে, তাদেরকে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপদেষ্টা বানিয়েছিল। একইভাবে আমরা দেখেছি, খালেদা জিয়া সেই নিজামী থেকে শুরু করে যারা যারা একেবারে সরাসরি বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিল। খুনি রশীদ এবং হুদা— তাদের ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে এনে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসায়। খালেদা জিয়া কেন এটা করেছিল? এর জবাব কি বিএনপি দিতে পারবে? সন্ত্রাস, খুন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র এগুলোর সঙ্গে যারা তাদেরকেই তারা মদদ দিয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যায় যারা জড়িত তাদের তারা মদদ দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ই আগস্ট শুধু একটা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়নি; এর একটা লক্ষ্য ছিল—যে আদর্শ নিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই আদর্শ এবং লক্ষ্যকে ধ্বংস করা। বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছিল, এটা তারা মানতে পারেনি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের পাশে ছিল, তারাও বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং বিজয়কে মানতে পারেনি। কাজেই ষড়যন্ত্র চলছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, দেশের ভেতরের অনেকেই বোধ হয় সেটা বুঝতে পারেনি। জাতির পিতাকে হত্যা করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। পাকিস্তানিরা সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন, সেই সময় প্রয়োজন ছিল সকল মানুষের একাত্ম হয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানো এবং সহযোগিতা করা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তাঁকে হত্যা করা হয়। আর এই প্রক্রিয়াটা শুরু করার জন্য দলের অভ্যন্তরে নানা ধরনের খেলা শুরু হয়। এ ছাড়া কিছু লোক, যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দালালি করেছিল এবং পাশাপাশি কিছু লোক, যারা জেনে হোক বা না জেনে হোক নানাভাবে সমালোচনামুখর হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘সমালোচনার প্রয়োজন আছে; কিন্তু তাদের লেখনী ও কার্যকলাপ ছিল পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে অপবাদ ছড়ানো। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল জাতির পিতার জনপ্রিয়তা, সারা দেশের মানুষের কাছে তাঁর যে গ্রহণযোগ্যতা তা নষ্ট করা। সেটা যখন তারা পারেনি তখন হত্যার পথ বেছে নেয়। যে কথাটা আমরা পাই বিবিসির কাছে দেওয়া কর্নেল ফারুক ও রশীদের ইন্টারভিউয়ে। তারা এই কথাটাই বলেছিল যে দীর্ঘদিন ধরে তারা চেষ্টা করছিল বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে সরাতে। কিন্তু জনগণের মন থেকে মুছতে পারেনি। তাই তারা এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কর্নেল ফারুক-রশীদরাই এটা বলেছে যে জিয়া সব সময় তাদের সঙ্গে ছিল এবং মোশতাক অবৈধভাবে যখন ক্ষমতা দখল করল, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল, তখনো খুনিদের সঙ্গে এবং মোশতাকের পাশে ছিল। এ কারণেই জিয়াউর রহমানকে তখন সেনাপ্রধান করা হয়। এর মাধ্যমে মোশতাক এটাই প্রমাণ করে দিল, তারা একসঙ্গে চক্রান্তে সম্পৃক্ত ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোশতাক বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আমরা ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই, দেখি সিরাজউদ্দৌলার সাথে বেইমানি করেছিল মীরজাফর। ব্রিটিশ বেনিয়ার দল তাকে ব্যবহার করেছিল। সেও কিন্তু তিন মাস ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। দুই মাসের বেশি কিছু সময় পরে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ঠিক মোশতাকও তাই। যাদের প্ররোচনায় সে এই বেইমানি বা মোনাফেকিটা করেছিল এবং জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে মদদ দিয়েছিল তারা কিন্তু তাকে ক্ষমতায় রাখেনি। ক্ষমতায় চলে আসে আসল খলনায়ক জিয়াউর রহমান।’
তিনি বলেন, ‘মোশতাকের পতনের পর জিয়াউর রহমান হয়ে গেল একাধারে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি। এই দুই পদ নিয়েই সে বিরাজমান ছিল। তাহলে এটা থেকে কি প্রমাণিত হয়? এইভাবে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে তারা কী করেছে? সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হলো। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসার যারা ছিল একে একে সকলকে হত্যা করা হয়েছিল। পঁচাত্তরের পরে সেনাবাহিনীতে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি সেনা সদস্য ও অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবারের খোঁজও কেউ নেয়নি।’
এ সময় পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে অনেকে কেন জিয়াউর রহমানকে সমর্থন দিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর ‘কোনো দিন পাননি’ বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে তারা কি এটা পারে? আর এখনো দেখা যায় যে কিছু লোক, এরা সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে। এই দেশে যত রক্তপাত, যত হত্যাকাণ্ড, যা কিছু সবই তো সেই থেকে শুরু।’
আলোচনাসভার শুরুতে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা শোকাবহ যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবু নাসের চৌধুরী। এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে কবি মহাদেব সাহার কবিতা আবৃত্তি করেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।