Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়া ভারতের জনগণের জন্য গর্বের-নরেন্দ্র মোদি
--সংগৃহীত ছবি

বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়া ভারতের জনগণের জন্য গর্বের-নরেন্দ্র মোদি

অনলাইন ডেস্ক:

মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপট আর আজকের বাংলাদেশের পার্থক্যটা তুলে ধরলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে তিনি বললেন, ‘একটি স্বৈরাচারী সরকার তার নিজের নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। তাদের ভাষা, তাদের কণ্ঠস্বর ও পরিচয়কে চূর্ণ করছিল। অপারেশন সার্চলাইটের নিষ্ঠুরতা, নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের যতটা সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।’

মোদি বলেন, ‘এত কিছুর মাঝেও এখানে এবং আমাদের ভারতীয়দের জন্য আশার যে এক কিরণ দেখা গেল—তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ ১০ দিনব্যাপী ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন সভাপতি। অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশের পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান করেন। শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা।

নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়া ভারতের জনগণের জন্য গর্বের।

বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই টিকে থাকবে, বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে, এমন কোনো শক্তি নেই।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরোধিতাকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল এবং বাংলাদেশের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাসও ছিল।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যাঁরা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করেছিলেন, যাঁরা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যাঁরা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাঁদের ভুল প্রমাণ করছে।’

বাংলাদেশের জাতীয় দিবস, স্বাধীনতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এই গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করায় ধন্যবাদ জানান নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করছে। ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতীয় ভাই-বোন তাদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশের জন্য।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানজিকে শ্রদ্ধা জানাই, যিনি সোনার বাংলার স্বপ্নের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। আমাদের ভারতীয়দের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে আমরা শেখ মুজিবুরজিকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করার সুযোগ পেয়েছি।’

বাংলাদেশিদের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের স্মরণ করেন। তিনি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শিক্ষাবিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ, ভাষাশহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার ও শফিউরকে স্মরণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের পাশে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেই সাহসী সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়েছিলেন, আত্মত্যাগ করেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে খুব বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ’, জেনারেল অরোরা, জেনারেল জ্যাকব, ল্যান্স নায়েক অ্যালবার্ট এক্কা, গ্রুপ ক্যাপ্টেন চন্দন সিং, ক্যাপ্টেন মোহন নারায়ণ রাও সামন্তসহ এমন অনেক বীর রয়েছেন যাঁদের নেতৃত্ব ও সাহসের কাহিনি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।’ মোদি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার এই বীরদের স্মরণে আশুগঞ্জে একটি স্মৃতিসৌধ উৎসর্গ করেছে।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশ নেওয়া আমার জীবনের প্রথম আন্দোলনগুলোর মধ্যে একটি। আমার বয়স তখন ২০-২২ বছর ছিল, যখন আমি ও আমার অনেক সহকর্মী বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য সত্যাগ্রহ করেছিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থন করায় আমি গ্রেপ্তার হয়েছিলাম এবং কারাগারেও গিয়েছিলাম। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যতটা আকুলতা এখানে ছিল, ততটা আকুলতা সেখানেও ছিল।’

মোদি বলেন, ‘এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত জঘন্য অপরাধ ও নৃশংসতার চিত্রগুলো আমাদের বিচলিত করত এবং রাতের পর রাত নির্ঘুম করে রাখত।’

মোদি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ, কৃষক, যুবক, শিক্ষক ও শ্রমিক সবাই এক হয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করে। তাই আজকের এই দিন মুজিববর্ষ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, তাঁর আদর্শ ও সাহসকে স্মরণ করার জন্যও আদর্শ একটি দিন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে ভারতের প্রতিটি কোণ থেকে, প্রতিটি দল থেকে সমর্থন মিলেছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীজির প্রয়াস ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ভূমিকা সর্বজনবিদিত।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি আনন্দময় কাকতালীয় ঘটনা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর আর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর একসঙ্গে পড়েছে। আমাদের উভয় দেশের জন্যই একবিংশ শতাব্দীর আগামী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ঐতিহ্যের অংশীদার, আমরা উন্নয়নেরও অংশীদার। আমরা লক্ষ্যও ভাগাভাগি করি, চ্যালেঞ্জগুলোও ভাগাভাগি করি। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাণিজ্য ও শিল্পে যেখানে আমাদের জন্য একই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি সন্ত্রাসবাদের মতো সমান বিপদও রয়েছে। এই জাতীয় অমানবিক ঘটনাবলির পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবে রূপদানকারী শক্তিগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং তাদের মোকাবেলা করার জন্য সংগঠিতও হতে হবে। আমাদের উভয় দেশেই গণতন্ত্রের শক্তি রয়েছে, এগিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট দূরদর্শিতা রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অগ্রযাত্রা এই পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সমান জরুরি।’

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ ভারত আর বাংলাদেশ দুটি দেশের সরকারই এই সংবেদনশীলতা উপলব্ধি করছে আর সেদিকেই অর্থবহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রমাণ করেছি যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতা থাকলে সব সমস্যারই সমাধান করা যায়। আমাদের স্থল সীমান্ত চুক্তি এর সাক্ষী।’

মোদি বলেন, “করোনার এই দুঃসময়েও দুটি দেশের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রয়েছে। আমরা ‘সার্ক কভিড তহবিল’ গঠনে সহযোগিতা করেছি, নিজেদের মানবসম্পদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছি। ভারত খুবই আনন্দিত যে ভারতের তৈরি টিকাগুলো বাংলাদেশের ভাই-বোনদের কাজে লাগছে।”

নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে দুই দেশের তরুণদের মধ্যে আরো উন্নত যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশের ৫০ জন তরুণ উদ্যোক্তাকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশি যুবকদের জন্য সুবর্ণ জয়ন্তী বৃত্তিও ঘোষণা করেন।

নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দুই দেশের লড়াই আরো জোরদারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে ভারত ও বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে একসঙ্গে অগ্রগতি করবে। আমি আবারও আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনারা আমার প্রতি যে হৃদ্যতা দেখিয়েছেন, ভারতের প্রতি এই ভ্রাতৃত্ব, আপনাদের আন্তরিকতা আমি প্রতিটি ভারতীয়র কাছে পৌঁছে দেব! ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরঞ্জীবী হবে।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply