১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের ভাষণে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা আজ গর্বিত যে মধ্যপ্রাচ্যে আমরা আরব ভাইদের এবং প্যালেস্টাইনি ভাইদের পাশে রয়েছি। ইসরাইলিরা তাদের ন্যায্য অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে। ইসরাইলিরা জাতিসংঘের প্রস্তাব মানে নাই। তারা দখল করে বসে আছে আরবদের ভূমি।
আরব ভাইদের এ কথা বলে দেবার চাই এবং তারা প্রমাণ পেয়েছে যে, বাংলার মানুষ তাদের পিছনে রয়েছে। আরব ভাইদের ন্যায্য দাবির পক্ষে রয়েছে। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে তাদের সাহায্য করবো।’ (মওলানা আবদুল আউয়াল, বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ, আগামী প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা, তৃতীয় মুদ্রণ, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা-২৭)
দুঃসাহসিক এই অর্থে যে বন্ধু দেশ ভারতকে পাশ কাটিয়ে ওই সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। অন্যদিকে দূরদর্শী এই অর্থে যে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে সেই সম্পর্ক ভবিষ্যতের জন্য আত্মিক-অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের সমৃদ্ধির সেতুবন্ধ তৈরি করে। সে সম্মেলনে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছিল।
আমরা তাদের ন্যায়সংগত অধিকার অস্বীকার করতে দেখেছি। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে তাদের ঠেলে দিতেও দেখেছি। আর এসব অকথ্য যাতনার চূড়ান্ত নিদর্শন হয়ে আছে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা। আর এ জন্যই অতীতের তুলনায় আজ এই শক্তিকে প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজে লাগানোর প্রয়োজন বেশি। ধ্বংস নয় সৃষ্টি, যুদ্ধ নয় শান্তি, দুর্ভোগ নয় মানুষের কল্যাণে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা যদি মহানবী (সা.) প্রচারিত মানব প্রেম ও মানব মর্যাদার শাশ্বত মূল্যবোধ আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পারি, তা থেকে বর্তমানকালের সমস্যা সমাধানে মুসলিম জনসাধারণ সুস্পষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এসব মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে শান্তি ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আমরা একটি নতুন আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য গড়ে তুলতে পারি। আরব ভাইদের ওপর যে নিদারুণ অবিচার হয়েছে, অবশ্যই তার অবসান ঘটাতে হবে। অন্যায়ভাবে দখলকৃত আরবভূমি অবশ্যই ছাড়তে হবে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে জেরুজালেমের ওপর। আল্লাহর কৃপায় আমরা এখন আমাদের সম্পদ ও শক্তি এমনভাবে সুসংহত করতে পারি, যাতে আমাদের সবার জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার অর্জন করা যায়। এই সাফল্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সবার যৌথ প্রচেষ্টা সফল করুন।’ (সূত্র : ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১০, পৃ.-১৪-১৫)