দেশে প্রাপ্তবয়স্করা গড়ে প্রতিদিন প্রয়োজনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ডাল খেয়ে থাকেন। গতকাল শুক্রবার বিশ্ব ডাল দিবস উপলক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
দেশে প্রথমবারের মতো ডাল দিবস পালন উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। একই সঙ্গে শোভাযাত্রা ও ডালের তৈরি খাবারের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল—‘টেকসই আগামীর জন্য ডাল’।
বারির ডাল গবেষণা কেন্দ্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৪৫ গ্রাম ডালজাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দেশে মাথাপিছু প্রাপ্যতা ২৮ গ্রাম, আর মানুষ মাথাপিছু মাত্র ১৭ গ্রাম ডাল খেয়ে থাকে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।
সেমিনারে কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ডালের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘ছোট্ট দেশে থেকে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগানে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে প্রতিযোগিতা করতে হয়। ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। এটির উৎপাদনে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। ধানের সঙ্গে ডালসহ অন্যান্য ফসল প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এ জন্য আমরা ধানের উৎপাদন না কমিয়ে ডালের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ বছর যেমন আমরা ধানের উৎপাদন না কমিয়েই দুই লাখ ৫০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা আবাদ বাড়াতে পেরেছি। তেমনি ডালের উৎপাদন বাড়াতেও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে, যাতে বছরে ১৩-১৪ লাখ টন ডাল উৎপাদন করতে পারি। এতে আমদানি নির্ভরতা অনেকটা হ্রাস পাবে।’
কৃষিসচিব বলেন, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে বিগত ১৪ বছরে ডালের উৎপাদন প্রায় চার গুণ বেড়েছে। দেশে বর্তমানে ডাল উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ডালের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। এতে প্রতিবছর প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করতে হয়। এই আমদানিতে ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়।
ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা মেটাতে হলে ডালের উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ডাল খাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যেই বিশ্ব ডাল দিবস পালন করা হচ্ছে।’
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, ‘দেশে আবাদি জমির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের ডাল ফসল উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। এই শস্য বিন্যাসে ডালের আবাদ সম্প্রসারণ করার সুযোগ সীমিত। তবে বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চল, চরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চল, রেল সড়ক ও রাস্তার ধারে এবং বসতবাড়িতে উপযুক্ততা বিবেচনায় ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন মাঠশস্য ও ফলের বাগানে (কুল, কলা, পেয়ারা, মাল্টা, আম, লিচু ইত্যাদি) ডাল ফসলকে মিশ্র ফসল ও আত্মফসল হিসেবে চাষের মাধ্যমে ডালের উৎপাদন বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’
বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বলেন, ডাল নিয়ে বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় অনেক আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ ও সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ২.৫ টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে। তাহলে স্বল্প জমি থেকেই বেশি ডাল উৎপাদিত হবে।
বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকারের সভাপতিত্বে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, সদস্য পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, ডাল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন, সাবেক পরিচালক তপন কুমার দে, এসিআইএআরের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর এম জি নিয়োগী, এসিআই অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারী প্রমুখ বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আশুতোষ সরকার।