চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ প্রেম যে কাঁঠালের আঠা, লাগলে পড়ে ছাড়ে না।’ সত্যি প্রেমের অনুভূতি এক অদ্ভুত অনুভূতি। প্রেমে পড়লেও জ্বালা আবার এর স্বাদ না নিলেও যেন মন ভরে না। তবে হরেক রকমের প্রেম বর্তমান আমাদের এই দুনিয়ায়। প্রেমে পড়ার সঠিক কোনও বয়সই হয় না। তাই যখন ইচ্ছা তখনই পড়া যেতেই পারে। জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এসে প্রেমের বিভিন্ন সংজ্ঞার মানে বোঝা যায়। কিন্তু লুকিয়ে প্রেম করার মজাটাই একটু অন্যরকম হয়ে থাকে।
সাইকোলজিস্ট রবার্ট স্টেনবার্গ ভালবাসাকে তিনিটি উপাদানের মধ্যে ভাগ করেছেন। সেই উপাদানটিকে একটি ত্রিভুজের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। তিনটি উপাদান হল- আবেগ(যৌন অথবা রোম্যান্টিক আকর্ষণ), অন্তরঙ্গতা (গভীর অনুভূতি) এবং সহানুভূতি (শুধুমাত্র সম্পর্ককে রক্ষা করাই নয়, তাকে সসম্মানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া)।
প্রেমের কারনে আমরা শুনি নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কথা। সম্পত্তি প্রেমিকার বিয়েতে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম কাজ করে বসে আছেন গণমাধ্যমকর্মী রাজিব শর্মা। ৭ই মে ২০২১ শুক্রবার তিনি তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেইজে তার প্রেমিকার বিয়েতে শুভকামনা জানান। এবং অনাথ, দুঃস্থ, অসহায় পথচারি ও রিকশাচালকদের মাঝে খাবার বিতরন করেন।
পাঠকদের পড়ার সুবিধার্থে পেইজের পোস্টটি হুবহু উপস্থাপন করা হলোঃ
‘জীবনে একবার প্রেমে পড়ছিলাম। আমার একটি ভুল ছিল, জেনে শুনে হিন্দু অতি ধার্মিক মেয়ের সাথে প্রেম করা। সাধারণত অতি ধার্মিক মেয়েরা সতী ও সততার অভিনয় ভালোয় করতে পারে। আমি জানি, আমার সাথে সম্পর্কস্থাপন ও ব্রেকাপের পর আবার নতুন কেউ আসলে তার ক্ষেত্রে দাবি করবে সে অবুঝ শিশু। প্রেম কি তাও জানে না। একদম ইনোসেন্ট। আমি এখন এটিই বিশ্বাস করি, একজন ব্যক্তির ধার্মিক হতে হলে, সে কখনো সত্য কথা বলতে পারে না। তাকে আজীবনই মিথ্যা, ধোঁকাবাজি, প্রতারনা ও অভিনয়ের আশ্রয় নিতে হবে। মিথ্যার মাঁঝেই এরা দাবি করবে এরা একেকজন সৎ ও সতী।
সুতরাং অনেকসময় ধার্মিকরা কখনো মানবিক হতে পারে না এই কথাটি একাদশ শ্রেণী থেকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করলেও মেয়েটির সামনে আমি এটি ভুলে যেতাম। আমার অনেক ধর্মহীন বন্ধু, টিচার, বড়বোনদের কাছেও বকা শুনতে হয়েছিল কারন ধর্মবাদী মেয়ের সাথে সম্পর্ক করায়। মেয়েটি জানতো আমি একজন কট্টর মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনস্ক ধর্মহীন, নারীবাদ সমর্থক, সে জেনেই প্রেম করছিল। সে ধর্মের প্রতি এতটি অন্ধ ছিল যে ধর্মের জন্য মানুষ হত্যা করতেও পারে। কিন্তু মুক্তমনা যেনে, বুঝে, মেনে নিতে না পারলে একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কস্থাপন করা মোটেই উচিত ছিল না।
আবার ধর্মহীন, মুক্তমনা, নারীবাদ সমর্থকদের পছন্ড ঘৃণা করেই, সেই সাথে অনান্য ধর্মালম্বীদেরও ঘৃণা করে। ভাগ্যিস ক্ষমতা এসব ধর্মান্ধদের হাতে ছিল না। না হয় পৃথিবীকে আরো ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করতো। উনি আমার ধর্মহীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মুক্তমনা ও নারীবাদ লেখালেখির কারনে আমার জীবন থেকে বিদায় নিয়েছিল। উনার বিদায় নেওয়াতেই প্রথম দুঃখ পেয়েছিলাম। পরে নিজেকে স্বান্তনা দিই যে চলে গিয়েছে আরো ভালো হয়েছে। কারন এইরকম মিথ্যাবাদী, ধার্মিক মেয়ের সাথে আমার পক্ষে থাকাও সম্ভব না। কারন পৃথিবীতে ভয়ংকর যুদ্ধ, রক্তাক্ত, হত্যাজনিত ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত ছিল অধিকাংশ ধার্মিক নারীরা। সুতরাং ধার্মিক নারী মানেই একেকজন ভয়ংকর।
উনার কর্মকান্ডগুলো বিরুদ্ধে অভিযোগ ও আঙ্গুল তুলতে চাইলে, আমি এই মুহুর্তেও পারি। উনি কখনো উনার অন্যায় ও অপরাধগুলোর উত্তর দিতে পারবে না। এমনকি আইনের উচ্চতম স্থানে গেলেও। কারন আমার কাছে প্রত্যেকটি প্রমাণ আছে। আমার স্থানে একজন ধার্মিক পুরুষ হলে উনার কর্মকান্ডগুলোকে ভয়ংকরভাবে দেখতো। কিন্তু আমি দেখছি না কারন এই মুহুর্তে একজন ধর্মান্ধ মিথ্যাবাদী নারীকে নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।
আমি নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক, মুক্তচিন্তক ও ধর্মহীন ভাবি। একশ্রেণীর ধর্মবাদীদের অভদ্রতা থাকতে পারে, নোংরামি, মিথ্যাবাদিতা থাকতে পারে একজন মুক্তচিন্তকের পক্ষে তা সম্ভব নই। ততটা নোংরা হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নই।
যাই হোক, মেয়েটির চলে যাওয়ার মুহুর্তটি নীরবে মেনে নিয়েছে। এক লাইনও অভিযোগ করিনি, এখনো করবো না। যে যেতে চাই তাকে যেতে দেওয়া ভালো।
উনার আজ মেহেদী, গায়ে হলুদ বা এইরকম কিছু, আমি আসলে এসব বুঝিনা। আগামিকাল বিয়ে। উনার জন্য শুভকামনা। উনার বিয়ে উপলক্ষে আজ পথভিক্ষুক, রিকশাচালক ও পথশিশুদের মাঝে রাতের খাবার বিতরন করা হলো।
বি.দ্রঃ কেউ মনে করবেন না আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছি, মোটেই না। কোন ধর্মান্ধের জন্য মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া আমার মানায় না। আমার জীবনের উদ্দেশ্য এত টুনকো নয় যে, সামান্য উগ্র ধর্মান্ধের জন্য আমি ভেঙ্গে পড়বো।’
সুতরাং রাজিব শর্মার পোস্টের ভিত্তিতে জাতীয় দৈনিক সকালবেলা’র প্রতিনিধি যোগাযোগ করলে, তিনি বলেন, প্রেম পুরোপুরি মানসিক বিষয়। এটি মানুষের মনে তৈরি হয়। আপনি ইচ্ছা করলেই কারো প্রেমে পড়তে পারবেন না যদি আপনার মন সেটিকে মেনে না নেয়। প্রেম এমন একটি শক্তি যা আপনার সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাবে। আর তখন আপনার মনের নির্দেশনা আপনি শুনতে বাধ্য হয়ে যাবেন। এটি আপনাকে বিষ্মিত করে দেবে। প্রেম কখন যে হয়ে যাবে আপনি তা বুঝতেও পারবেন না। অজান্তেই হয়ে যায়। ঠিক আমিও প্রেমে পড়ছিলাম। বিচ্ছেদও হয়েছে। এত জটিলভাবে দেখার প্রয়োজন নেই।
তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই করোনা মহামারিতে আমরা এখনো বেঁচে আছি। প্রেমের বিচ্ছেদে যে আমাকে অপরাধমূলক কাজ, হতাশ, টেনশন, যন্ত্রণা, আক্রমণাত্মক হতে হবে এমন কোন কথা নেই। সত্যিকারের প্রেমের বিচ্ছেদে কোন শত্রুতা নেই। শত্রুতা থাকাও উচিত নই। আমি কোন ধর্মান্ধ নই। আমার পরিচয় আমি মানুষ। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা ধর্মের ভিত্তিতে আমি কাউকে পরিচয় দিতে পচ্ছন্দ করি না। কেউ ধর্মের ভিত্তিতে ঘৃণা করলেও তাদেরকেও পছন্দ করি না। আমি খেটে খাওয়া মানুষদের ভালোবাসি। তাই এই শুভদিনে আমার কারনে একজন অনাহারির মুখে অন্ন তুলে দিতে পেরে নিজেকে আরো সৌভাগ্যবান মনে করি।