অন লাইন ডেস্ক:
সৌদি আরবে ফিরতে চাওয়া প্রবাসীদের কাছে আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। বুধবার দুপুরে সৌদিপ্রবাসীদের ছয় প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা তিনি জানিয়েছেন।
সৌদিপ্রবাসীরা আজ বেলা ১১টার দিকে ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন। এ সময় তারা মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন।
বেলা ১টার দিকে সৌদিপ্রবাসীদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে যায়। আলোচনা শেষে বেলা দেড়টার দিকে তারা বাইরে বেরিয়ে আসে।
পরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সৌদিপ্রবাসীদের কাছে তিনি সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। তাদের সমস্যার বিষয়ে তখন আপডেট জানাবেন।
এদিকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ প্রবাসীরা সৌদি আরবে ফেরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ও ফ্লাইটের দাবিতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেছেন।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে তারা রমনা এলাকার ইস্কাটনে মন্ত্রণালয়টি ঘেরাও করেন। এ সময় তারা মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন।
প্রবাসীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের আজ বৈঠকের কথা রয়েছে।
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এস এম শামীম গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কের একপাশে প্রবাসীরা অবস্থান করছেন। দুপুরে তাদের পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হবে।
এদিকে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিটের জন্য সৌদি প্রবাসীরা বুধবারও রাজপথে বিক্ষোভ করছেন। তার দুই এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন, তার পরও টিকিট মিলছে না।
সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার টিকিট না পেয়ে আজ সকালেও রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার প্রবাসী জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ সময় টিকিটের দাবিতে তারা নানা স্লোগান দেন। তারা বলছেন, ১ অক্টোবরের মধ্যে আমরা যদি সৌদিতে ফিরতে না পারি; তবে আমাদের আকামা বাতিল হয়ে যাবে।
বিক্ষোভে অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে আগত আলমাস হোসেন বলেন, সরকারের জরুরি পদক্ষেপ না নিলে আমরা সৌদিতে ঢুকতে পারব না। আমাদের পরিবার বিপদে পড়ে যাবে। আমরা বেকার হয়ে পড়ব।
এভাবে ৬৪ জেলা থেকে কয়েক হাজার লোক এসে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। কুষ্টিয়ার কবির হোসেন বলেন, আমাদের আকামা ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সৌদি সরকার ঢুকতে দেবে না। আমরা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বলা হয়েছে, তোমরা যথাসময়ে সৌদিতে না এলে আমাদের করার কিছু নেই।
সরকার যেন জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে যাদের আকামা নেই, তাদের টিকিটের ব্যবস্থা করেন, প্রবাসীরা বিক্ষোভে সেই দাবিই জানিয়ে আসছেন।
প্রবাসীরা বলেন, বিভিন্ন মেয়াদে তাদের সবার রিটার্ন টিকিট কেনা আছে। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি সৌদিতে ফিরতে না যেতে পারেন, তা হলে যেন তিন মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সৌদি সরকারের কাছে সেই আবেদন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
টিকিট নিয়ে রাজধানীজুড়ে চলছে হাহাকার। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস কিছু যাত্রীকে টোকেন দিলেও এখনও টিকিট ইস্যু করেনি। যাদের রিটার্ন টিকিট আছে তাদের টিকিটও রি-ইস্যু করছে না।
হাজার হাজার যাত্রীর মধ্যে প্রতিদিন ৩০০ জনকে টোকেন দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। এ কারণে সংস্থার একমাত্র কার্যালয় সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই।
ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার সৌদি প্রবাসী টিকিট কাটতে ছুটে আসছেন ঢাকায়। প্রতিদিনই এদের সংখ্যা বাড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কোনো ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য অফিস বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে যাওয়া নিশ্চিত করতে সে দেশের সরকারকে তিন মাসের জন্য আকামার মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার বাংলাদেশের দূতাবাস এ অনুরোধ জানিয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিক্ষোভে নামেন প্রবাসীরা। কারওয়ানবাজার মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সৌদি আরব থেকে ছুটিতে এসে আটকেপড়া প্রবাসীরা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মতিঝিল কার্যালয় অবরুদ্ধ করেন তারা। কয়েকশ প্রবাসী এই বিক্ষোভে অংশ নেন। প্রথমে তারা কারওয়ানবাজারে সৌদি এয়ারলাইনস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
পরে মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কার্যালয় অবরুদ্ধ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পর তারা অবরোধ তুলে নেন।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, টিকিট জটিলতা নিরসনের দাবিতে প্রবাসীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে আমরা সেখানে ছুটে যাই এবং তাদের বোঝাতে সক্ষম হই যে, রাস্তা অবরোধ করে এর সমাধান হবে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে সমাধান করার পরামর্শ দিলে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে চলে যান।
তবে জানতে পেরেছি তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গেছেন। এর আগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারওয়ানবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন সৌদি প্রবাসীরা।
এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে অবরোধ থেকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাদের সপ্তাহে দুটি সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। কাজেই তারা বেশি টিকিট বিক্রি করতে পারছে না।
এ কারণে রাস্তায় ভিড় জমে গেছে প্রবাসী যাত্রীদের। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বাংলাদেশ বিমানও সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে পরে অনুমতি না পাওয়ায় সরে এসেছে।
ফলে বিমানের টিকিট নিয়েও লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। টিকিট পেতে তাই বিমানের মতিঝিলসহ সব কটি সেলস কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সোমবার জানিয়েছেন, টিকিটের এই ক্রাইসিস দু-এক দিনের মধ্যে কেটে যাবে।
তিনি বলেছেন, সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে যত ফ্লাইটের অনুমতি চাইবে তাদের তত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হবে। অপরদিকে বাংলাদেশ বিমানকেও ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিমানও সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে বলে জানিয়েছে। শিগগির বিমানের ল্যান্ডিং পারমিশনও হয়ে যাবে। এ জন্য কূটনৈতিকভাবে সব পর্যায় থেকে কাজ চলছে।
বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনস ফ্লাইট শুরু করলে এ পরিস্থিতি থাকবে না। তিনি আরও বলেন, সৌদি এয়ারলাইনসকে দেয়া সপ্তাহে দুটি ফ্লাইটের অনুমতি বাতিল করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে তাদের আরও ফ্লাইট দেয়া হবে।
অনেকের কাছে রিটার্ন টিকিট থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে যেতে পারেননি। এখন সেই টিকিট কনফার্ম করতে এসেছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে-তারা কীভাবে যাবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
কিন্তু শতচেষ্টা করেও কেউ নতুন করে রিটার্ন টিকিট রি-ইস্যু করতে পারেননি। উপরন্তু খোলা আকাশের নিচে একরাত একদিন কাটিয়েছেন।
ঢাকায় সৌদি এয়ারলাইনসের সেলস ইনচার্জ মোহাম্মদ ওমরের বিরুদ্ধে টিকিট নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন অনেক প্রবাসী যাত্রী।
হাসান নামের এক যুবক বলেন, ‘আমার ভিসার মেয়াদ শেষ ৩০ সেপ্টেম্বর। আমাকে রিটার্ন টিকিটের রি-ইস্যু টোকেন দেয়া হয়নি গত দুদিনেও। অথচ গোপনে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে অক্টোরের যাত্রীদের দেয়া হয়েছে টোকেন। শুধু টাকার বিনিময়ে এটি সম্ভব হচ্ছে। রিটার্ন টিকিট থাকা সত্ত্বেও ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে অনেকেই টোকেন পেয়েছেন। প্রকাশ্যে এমন দুর্নীতির ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
সোমবার প্রবাসীদের বিক্ষোভের মুখে ১০ প্রতিনিধিকে ভেতরে নিয়ে যায় সৌদি এয়ারলাইনস। তাদের মাধ্যমে অন্যদের টিকিট সংগ্রহের সিরিয়ালের টোকেন দেয়া হয়।
তবে মঙ্গলবার কোনো ঘোষণা না দিয়েই অনির্দিষ্টকালের জন্য অফিস বন্ধ করে দেয় তারা। এ কারণেই বিক্ষোভে নামেন প্রবাসীরা।