অনলাইন ডেস্কঃ
করোনাভাইরাসের ধাক্কা শেষ না হতেই নির্বাচনী ব্যস্ততা বেড়েছে আওয়ামী লীগে। জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া ৫ আসনের উপনির্বাচনের সঙ্গে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সারা দেশের পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবে আওয়ামী লীগ।
তবে দলীয় না জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে- তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর জোটের বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হবে। যদিও এ মুহূর্তে দলীয়ভাবেই যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও পিছিয়ে নেই। আলাদাভাবে প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে জোটভুক্ত দলগুলো।
তবে জোটগত বা দলীয়ভাবে যেটিই হোক না কেন- প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূলের জনপ্রিয়, ত্যাগী এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম- এমন নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হবে এমনটি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ের মতো এবারও স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছড়াছড়ি। বিভিন্নভাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন তারা।
পোস্টার-ব্যানারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। স্থানীয় দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের সঙ্গেও সখ্য বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। মনোনয়নের আশায় দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের বাসা-অফিসেও।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান রোববার বিকালে বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন চলমান প্রক্রিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে পৌরসভা নির্বাচন হবে। গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
এ নির্বাচনগুলোকে সামনে রেখেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে আমাদের দলের তৃণমূলের জনপ্রিয়, সংগঠনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম- এমন নেতাদেরই দলীয় মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ সব সময় ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও ত্যাগীদেরই মূল্যায়ন করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা বিতর্ক রয়েছে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
উপনির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলগতভাবেই করে থাকে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও দলগতভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। দলীয় মনোনয়ন ও প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজও আলাদাভাবেই করা হবে।
তবে কোথাও জোটের শক্ত প্রার্থী থাকলে সেখানে মূল দল আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় চাইবেন শরিক দলের নেতারা। নির্বাচনকালীন সেই বিষয়গুলো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রোববার বিকালে বলেন, এবার তো এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে, দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে।
আমরাও দলীয়ভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে কোনো জায়গায় কোনো শরিক দলের শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে, সেটা আওয়ামী লীগসহ অন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি।
দলগতভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সাধারণত জোটগত হয় না। তবে এখনও যেহেতু সময় আছে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বিগত সময়ের মতো এবারও সারা দেশে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি।
পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রতিটির বিপরীতে অন্তত ৩ থেকে ৫ জন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বিভিন্নভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন।
২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়েও আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। সুযোগ পেলেই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে বলছেন নিজেদের প্রার্থিতার কথা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান রোববার বিকালে বলেন, পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এ নির্বাচনে তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্যদেরই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আর যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন বা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তাদের বিষয়ে এবার আমরা সতর্ক। কারণ অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনে আসছে।
এদিকে বিগত সময়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক বিভক্তি তৈরি হয়।
অনেক জায়গায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারা একে অপরের মুখোমুখি অবস্থান নেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থনও দেন অনেকেই।
মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দলের নেতারাই হাজারও অভিযোগ তোলেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরেই দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কয়েকশ’ অভিযোগ জমা পড়েছিল।
সে সময় বঞ্চিতদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য জেলাভিত্তিক ফাইলও তৈরি করা হয়েছিল।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রোববার বিকালে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনমুখী দল।
সামনে পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড দলের তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মনোনয়ন দেবে।
যারা দলের জন্য নিবেদিত এবং যে কোনো বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ান এমন জনপ্রিয় নেতাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে।