অনলাইন ডেস্কঃ
দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারে বৃহস্পতিবার রাতে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আনা হলেও শুক্রবার সকালে কেজিতে নতুন করে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
যদিও ভারতের পক্ষ থেকে বন্দরে আটকে থাকা পেঁয়াজ ছাড় করার খবরে বুধবার থেকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছিল। ব্যবসায়ীদের অজুহাত- সব স্থলবন্দরে আটকে আছে প্রায় এক হাজার টন পেঁয়াজ, যা দেশের বাজারে আনা সম্ভব হলে দাম কমতে থাকবে।
বুধ ও বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ না আসায় ব্যবসায়ীরা আবারও কারসাজি করতে শুরু করেছে। তারা একদিনের ব্যবধানের শুক্রবার আবারও পণ্যটির দাম বাড়াতে শুরু করেছে। তাই বাজারে পণ্যটির দাম ভোক্তা সহনীয় করতে সকাল থেকে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তদারকি টিম।
এছাড়া ভোক্তার স্বার্থ চিন্তা করে শুক্র ও শনিবারসহ সপ্তাহের সাত দিন ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করবে টিসিবি। শুক্রবার থেকে এই বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন থেকে সপ্তাহের সাতদিন একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ এক কেজি করে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গের রফতানিকারক সমন্বয় কমিটির কর্মকর্তারা জানান, স্থলবন্দরগুলোতে আটকেপড়া পেঁয়াজবাহী ট্রাকগুলো ছাড় করার জন্য ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। যে কোনোদিন ট্রাকগুলো ছাড় দেয়া হতে পারে। তবে আশা করা যাচ্ছে শনি বা রোববার ছাড় করা শুরু হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানান, সব স্থলবন্দরে প্রায় এক হাজার পেঁয়াজবাহী ট্রাক আটকা পড়ে আছে। আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ভারত ট্রাকগুলো ছাড় করছে না। তবে আমরা জানতে পেরেছি, ট্রাকগুলো দু’য়েকদিনের মধ্যে ছাড় করা হতে পারে। তারা আরও বলেন, ট্রাকগুলো দেরিতে ছাড় করায় এগুলোর প্রায় অর্ধেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে ছয়টি পেঁয়াজবাহী ট্রাক এবং বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু সামনে চোখে পড়ে আরও তিনটি ট্রাক। এর একটু সামনে আরও দুটি ট্রাক দেখা যায়। ট্রাকগুলোর পিছু নিলে দেখা যায়, সেগুলো শ্যামবাজারে গিয়ে থেমেছে।
ট্রাকের চালক মো. আবদুল জানান, ট্রাকগুলোর পেঁয়াজ এই পাইকারি বাজারে আনলোড করা হবে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে একই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় প্রতিটি আড়তে থরে থরে রাখা হয়েছে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ বস্তা।
দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আরেক পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজার ঘুরেও পেঁয়াজের সংকট দেখা যায়নি। সেখানকার প্রতিটি আড়তে থরে থরে পেঁয়াজের বস্তা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। একই দিন রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির পর্যাপ্ত সরবরাহ লক্ষ্য করা গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ঘুরে ও বিক্রেতারা জানান, এ দিন পাইকারি দরে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকায়, যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা। আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা, যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, এই বাজারে পেঁয়াজ নেই তা বললে ভুল হবে। তবে সরবরাহ একটু কম। যে কারণে বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার দাম একটু বেড়েছে। তবে ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজ দেশের বাজারে এলেই দাম এক লাফে কমে যাবে।
সেখানে পাইকারি দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা খুচরা বিক্রেতা মো. শহিদুল্লাহ জানান, ভারত পেঁয়াজ ছাড় করবে এ সংবাদে পেঁয়াজের দাম বুধবার থেকে কমে বিক্রি শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ ছাড় করতে দেরি করায় আবারও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
একই দিন রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা, যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা, যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুম আরেফিন বলেন, আমরা পাইকারি থেকে খুচরা বাজার তদারকি করছি। এ সময় প্রত্যেক বিক্রেতার ক্রয়মূল্যের রসিদ ও বিক্রয় মূল্যের রসিদ মিলিয়ে দেখছি। কোনো ধরনের অপরাধ পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা শাস্তির আওতায় আনছি। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে দাম ভোক্তার হাতের নাগালে চলে আসবে।
তিনি আরও জানান, সকালে কারওয়ান বাজারে অভিযান শুরু করলে কয়েকজন বিক্রেতারা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে চলে যায়। পরে তাদের এনে আবার বিক্রি কার্যক্রম শুরু করিয়েছি।