অনলাইন ডেস্ক:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির বিতর্কিত সদস্যদের নিয়ে বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে দলটি। বিশেষ সতর্কতা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এবারের কেন্দ্রীয় উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পরও বিতর্কিত নেতামুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগেরই প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রীদের তদবিরে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতা বিভিন্ন উপকমিটিতে ঢুকে পড়েছেন। তাঁদের কারণেই সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে দলটিকে। তাই বিতর্কিত নেতাদের পাশাপাশি তাঁদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও শাস্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বিভিন্ন সময় উপকমিটির নেতাদের নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন দলেরই জ্যেষ্ঠ কোনো নেতা বা মন্ত্রী। এই পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য এগুলো যেন ওই নেতাদের আমলনামায় যোগ হয় সেদিকে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। যাঁরা অপকর্মকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেবেন ভবিষ্যতে তাঁদের দল বা সরকারে পদ-পদবি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমার কথা খুবই স্পষ্ট। যখন বিতর্কিত ব্যক্তিদের নানা অপকর্ম উদঘাটিত হয়, সবার সামনে আসে তখন তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু যাঁদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এই বিতর্কিতরা আওয়ামী লীগে স্থান পাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাঁরা ভুঁইফোড় বিভিন্ন সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দেন বা নানা ফাঁকফোকর দিয়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করান তাঁদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয়।’
বিতর্কের জের ধরে গত রবিবার ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে চলমান বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এখন আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সম্পাদকেরই সতর্ক হওয়া দরকার। তাঁদের উচিত নিজ নিজ উপকমিটিকে আবারও যাচাই-বাছাই করা। কোনো ফাঁক দিয়ে বিতর্কিত কেউ প্রবেশ করে থাকলে তাঁদের বাদ দেওয়া দরকার।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘অপকর্মকারীদের যাঁরা পৃষ্ঠপোষকতা দেন তাঁরা অনেক সময়ই জেনে বুঝে দেন না। অনেক সময়ই তাঁরা প্রতারণার শিকার হন। আবার অনেকে জেনে বুঝেই পৃষ্ঠপোষকতা দেন। তবে যাঁরাই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন তাঁরা কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ছেন। দলের মধ্যে তাঁদের নিয়ে কিন্তু নানা নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। এখন এটি আরো বাড়বে। সমালোচনাও কিন্তু একটি বড় শাস্তি।’
বাহাউদ্দিন নাছিম আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে অপকর্মকারীদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। এঁদের বিরুদ্ধে আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছি। যাঁরাই অপকর্মে যুক্ত হবেন, যাঁরা জেনে বুঝে তাঁদের প্রশ্রয় দেবেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের অনেক প্রভাবশালী নেতা না বুঝে অনেক কিছু করে ফেলেন। এমন লোককে কমিটিতে রাখার সুপারিশ করেন যাঁদের নিয়ে পরে দলকে বিতর্কিত হতে হয়। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। প্রভাবশালীদের উচিত কারো জন্য সুপারিশ করার আগে তাঁর বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া, বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা। এর পরও যাঁরা বিতর্কিতদের জন্য সুপারিশ করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দলের উচিত।’
দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমাদের কিছু মানসিক বিকারের ব্যামো হয়েছে। আমরা অতি ক্যামেরাপ্রীতির কারণে এসব আবর্জনাকে প্রশ্রয় দিই। আমাদের আশকারায় ওরা লালিত হয়। ওরা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে তখন আমাদের টনক নড়ে। আগে আমরা মানসিক বিকারের আত্মচিকিৎসা নিই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও জীবনাচারের প্রতি শতভাগ অনুগত হই। তাহলেই আবর্জনা ধুয়ে মুছে চলে যাবে বঙ্গোপসাগরে।’
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি সমালোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য করতে জোরালো সুপারিশ করেছিলেন একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী। এর আগে ব্যাপক সমালোচিত মোহাম্মদ সাহেদও একটি উপকমিটির চেয়ারম্যানের হাত ধরে উপকমিটিতে ঢুকেছিলেন। কয়েক বছর আগে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে একজন কেন্দ্রীয় নেতা চিঠি ইস্যু করে উপকমিটিতে কয়েক শ সদস্য যুক্ত করেছিলেন। এসব সদস্যের বেশির ভাগকে নিয়েই বিতর্ক ছিল। কিন্তু বিতর্কিতদের উপকমিটিতে যুক্ত করার পেছনে যাঁরা ছিলেন তাঁদের কারো বিরুদ্ধেই অতীতে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ।