অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতির দেশ উল্লেখ করে সবাইকে এক হয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পূজামণ্ডপে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সম্প্রতি কুমিল্লার পূজামণ্ডপে সৃষ্ট গুজবকে কেন্দ্র করে মণ্ডপ ভাঙচুর এবং অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সার্বক্ষণিকই আমরা যোগাযোগ রাখছিলাম এবং এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং যেখানে যেখানে যারাই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের খুঁজে বের করা হবে। এটা আমরা অতীতেও করেছি এবং সেটা আমরা করতে পারব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যথাযথ শাস্তি তাদের দিতে হবে। মানে এমন শাস্তি, যেন ভবিষ্যতে আর কেউ সাহস না পায় সেটাই আমরা চাই।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু দিন আগে কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটেছে তার খুব ব্যাপকভাবেই তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্য আমরা পাচ্ছি এবং অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের আমরা খুঁজে বের করবই এবং আমরা তা করতে পারব, কারণ এখন প্রযুক্তির যুগ। এটা বের করা যাবে এবং সে যেই হোক না কেন, যে ধর্মেরই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আর আমরা তা করেছি এবং করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে সে সময় এই যাত্রাটাকে ব্যাহত করার এবং সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভেতরে একটা সমস্যা সৃষ্টি করার এ ধরনের কিছু দুষ্টলোক দেশে রয়ে গেছে। যারা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। রাজনীতি নেই, কোনো আদর্শ নেই আসলে তারাই এ ধরনের কাজ করে। এটা তাদের এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যদি সকলে সচেতন থাকে তাহলে এগুলো যেমন প্রতিরোধ করা যায়, তেমনি এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন ঢাকার অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জির সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।
জাতির পিতার রেখে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক আদর্শ নিয়েই তাঁর সরকার পথ চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটা অসম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ সকলে একসঙ্গে বসবাস করবে এবং যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। অর্থাত্ ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। এটা বাংলাদেশে সব সময় ছিল এবং আছে। প্রতিটি উৎসবের সময় সকলে একসঙ্গে শামিল হয়ে আনন্দ উপভোগ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু দুষ্টচক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরের এই চেতনাটাকে নষ্ট করতে চায়।
জাতির পিতা সাংবিধানিকভাবেই আমাদের যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার নিশ্চিত করে যান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানান এবং নিজেরা নিজেদেরকে যেন ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বা সংখ্যালঘু না ভাবেন সে জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই মাটিতে আপনাদের জন্ম। কাজেই আপনারা এই মাটিরই সন্তান। সেখানে আপনারা সবাই নিজ অধিকারে বসবাস করবেন। কাজেই এখানে নিজেদের সংখ্যা দিয়ে বিচার না করাই ভালো। আপনারা স্বাধীন বাংলার একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করবেন এবং সেই আত্মবিশ্বাসটা আপনাদের মাঝে থাকতে হবে—এটাই আমি চাই।’ দেশের সকল মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করার সঙ্গে সঙ্গে সকলেই ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে এটাই তাঁর ইচ্ছা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না, আমরা আপনাদের নিজেদের আপনজন হিসেবে মানি। আপনারা সম-অধিকার নিয়ে এ দেশে বসবাস করবেন, ধর্ম পালন করবেন, উৎসব করবেন সেটাই আমরা চাই। আর এটাই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের আসল নীতি এবং আমাদের আদর্শ।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইসলাম ধর্মেও সকলের ধর্ম পালনের সম-অধিকারের কথা বলা রয়েছে উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি দলটির সভাপতি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও অনুরোধ করব, তাঁরাও যেন নিজ নিজ এলাকার মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতা করেন। যা তাঁরা করেও থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই দেশের মানুষ সুন্দরভাবে উৎসব উদযাপন করবেন। তাঁরা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবেন সেটিই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।
সূত্র : বাসস।