লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
আত্মসাৎকৃত যুবক হাজিরপাড়া ইউনিয়নের আবুল খায়েরের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন মিঝি (২৭)। শাহাদাৎ হোসেন স্থানীয় কফিলউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্নআহবায়ক।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১ বছর আগে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় ৮/১০ জন ব্যক্তি থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নানা কৌশলে হাতিয়ে নেয় এই যুবক । এরপর চাকরি হচ্ছে হবে বলে তাদের দিনের পর দিন অপেক্ষায় রাখে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছে। তখন তারা তাদের পাওনা টাকা চাইলে নানা অজুহাতে দিনের পর দিন দিবে দিচ্ছে বলে ঘুরাচ্ছে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে প্রতারক নিজে নিজে আত্মগোপনে গিয়ে তার পরিবার দ্বারা চন্দ্রগঞ্জ থানার তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সাধারণ ডাইরি করায় । থানায় সাধারণ ডাইরি করার পরে চন্দ্রগঞ্জ এলাকায় সৃষ্টি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শাহাদাত হোসেন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ আসতে থাকে আওয়ামীলীগের নেতাদের উপর। একপর্যায়ে শাহাদাত হোসেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে আত্মগোপন থেকে বের হয়ে আসে এবং ২০ শে অগাস্ট সবার পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করে। কিন্তু ২০শে অগাস্ট পাওনাদারদের টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার এবং চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন জাহাঙ্গীর এবং ইউপি মেম্বার মোঃ সেলিমের দারস্থ হয় শাহাদাত। ইউপি মেম্বাররা পুনরায় সময়বৃদ্ধি করে গ্রাম্য সালিশ এর তারিখ নির্ধারণ করে। গ্রাম্যসালিশে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেও সে টাকা ফেরত দিতে নয়ছয় করায় তার ক্রয়কৃত সিএনজি আটক করে পাওনাদাররা। একপর্যায়ে ইউপি মেম্বারদের চাপে পড়ে প্রত্যেক পাওনাদারকে ৫০০০০ টাকা করে দিতে বাধ্য হয় এই প্রতারক ।
এদিকে প্রতারণার এই অভিযোগ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নজরে না এনে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করায় ইউপি মেম্বাদের উপর ক্ষোপ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী স্থানীয় বিএনপি নেতা কালাম কেরানী, কৃষকলীগ নেতা বেল্লাল হোসেন, শারুক, ব্যবসায়ী রোবেল হোসেন অত্যন্ত আক্ষেপ করে এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় এই প্রতিনিধিকে জানায় , তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে শাহাদাত হোসেন তাদেরকে নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় কয়েক লক্ষ টাকা। তারা তাদের ভুল শিকার করে মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠ বিচার দাবি করে।
চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি শেখ নূর মোহাম্মদ জীবন মেসেজের মাধ্যমে এই প্রতিনিধিকে জানান, আমার ইউনিয়ন কৃষকলীগের সহ সভাপতি বেলাল হোসেনের এক আত্নীয় কে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয়।আমি কয়েক বার যোগাযোগ করার পর বিভিন্ন তারিখ দিয়ে সে আর টাকা দেয়নি। পরবর্তী তে আমি বেলাল ভাই কে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিই।
এদিকে শাহাদাৎ হোসেন পুলিশ বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন লোকের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগে স্থানীয় সামাজিক ক্লাব ‘ শতদল যুবক্লাবের ‘সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
শতদল যুব ক্লাবের সভাপতি রানা চৌধুরী এবং ক্লাবের অন্যতম উপদেষ্টা জামাল উদ্দিন বাদল মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, অত্রক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তার দায়িত্ব থেকে তাকে সাময়িক ভাবে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে এবং ক্লাবের সম্মান রক্ষায় খুব শীগ্রই তাকে ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও।
শাহী ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার সোহাগ হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, শাহাদাত দীর্ঘদিন থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। বিগত কিছুদিন থেকে তার বিরুদ্ধে পুলিশে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আসছিল। এক পর্যায়ে সে নিজে নিজে আত্মগোপনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবে গড়মিল করায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
অভিযোগের সত্যতা জানতে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সাথে। তিনি প্রতিনিধিকে টাকা নেওয়ার কথা সত্য বলে জানিয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করে এবং তিনি তার স্থায়ী সম্পত্তি বিক্রি করে মানুষের টাকা পরিষদ করবে বলে প্রতিনিধিকে জানায়।