কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নূর মোহাম্মদ পুকারীর বিরুদ্ধে পুলিশিং কমিউনিটি সেন্টারের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে পাকা দোকান নির্মাণের অভিযোগে মানববন্ধন করেছে ছেউড়িয়া এলাকার সর্বস্তরের জনগন। বৃহস্পতিবার ২২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১ টার সময় কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড লালন শাহ নতুন ব্রিজ সংলগ্ন পুকারী মেম্বারের দোকানের সামনে পুলিশিং কমিউনিটি সেন্টারের নির্ধারিত জায়গায় ঘন্টা ব্যাপী অবস্থান করে মানববন্ধন করে ছেউড়িয়া এলাকার সাধারন জনগন। এ সময় সাধারন জনগন বলেন,এসপি মেহেদী হাসান কুষ্টিয়া জেলায় থাকাকালীন সময়ে ছেউড়িয়া এলাকার শান্তিশৃংখলা বজায় রাখার জন্য তৎকালীন সময়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী কয়েকশত সাধারন জনগনের উপস্থিতিতে লালন শাহ মাজার রোড ব্রিজ সংলগ্ন জায়গাটি পুলিশিং কমিউনিটি সেন্টারের নির্ধারিত স্থান করে উদ্বোধন করেছিলেন এবং সেখানে পুলিশিং কমিউনিটি সেন্টারের নির্দিষ্ট জায়গার একটি বড় সাইন বোর্ডও ছিলো। তার পাশেই পুকারী মেম্বারের বেশ কয়েকটি সরকারি খাস জমিতে দোকান ছিলো। সুযোগ বুঝে পুকারী মেম্বার রাতের আধারে উক্ত সাইনবোর্ডটি নির্ধারিত জায়গা থেকে সড়িয়ে ফেলে এখন সেই জায়গায় ক্ষমতার জোড়ে পাকা দোকান নির্মান করছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী প্রশাসনের উর্ধতন মহলের নিকট প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন করেছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ছেউড়িয়া এলাকার মাদক ব্যবসায়ী শীর্ষ চরমপন্থী নেতা, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু নূর মোহাম্মদ পুকারির অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ ।তার বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে গেলে তার উপরে শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাসিয়ে দেওয়া হয় ।পূর্বে সে দশ জনেরও বেশি হত্যা করেছে এবং সে মামলায় তার কিছুই হয় নাই। এক সময় চাদাবাজি,হত্যা, গুম সহ বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ছিলো তার প্রতিদিনের রুটিন। কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলার একটি অংশ ছিলো তার নিয়ন্ত্রনে। ২০০৩ সালের ছেঊড়িয়া ট্রাজেডীর মুল পরিকল্পনাকারী নায়ক ছিলেন নুর মোহাম্মদ পুকাড়ী। ২০০৩ সালে লালন শাহ সেতু ঊদ্বোনের সময় তৎকালীন সময়ের প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়া কুষ্টিয়ায় আসেন এবং সেদিনই সন্ত্রাসী পুকারির ছেউড়িয়া মন্ডল পাড়ার নিজ বাসায় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের সামরিক সাখার প্রধান নুর আলম গামা হারা বাহিনীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক চলাকালীন সময় পুলিশ, বিডিয়ারের যৌথ অভিযানে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলাগুলি হয়ে ৭ জন নিহত হয়। এবং সে সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ও যৌথবাহিনী বিপুল পরিমান গোলা বারুদ ও ভারী ভারী অস্ত্র উদ্ধার করে। সেই মামলা থেকে বাচতে সেদিনই তার ছেলে রাব্বুল ও রাজীবকে নিয়ে পুকারী সিলেটে পালিয়ে যায়। পুকারি কুষ্টিয়া মিলপাড়ার হারা বাহিনীর প্রধান এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী হামিদুল,রাশিদুল বাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ডার ছিল। র্যাব ও পুলিশের সাথে ক্রসফায়ারে হামিদুল ও রাশিদুল নিহত হবার পর দলের সমস্ত দায়িত্ব নেন পুকারী। পরে সুযোগ বুঝে ছেঊড়িয়া মন্ডল পাড়া এলাকায় মেম্বার পদে নির্বাচন করে জর জবর দস্তী ভোট চুরি করে জয়যুক্ত হয়ে এলাকার প্রতিনিধি মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পান পুকারি। পুকারী মেম্বার হবার কারনে ক্রসফায়ারের হাত থেকে মুক্তি পায়।বর্তমানে ছেউড়িয়া মন্ডল পাড়ায় যে হিরােইনের ও ইয়াবার ব্যবসা পরিচালনা হয়, তার মূলহুতা এই নূর মহম্মদ পুকারি ও তার ৩ ছেলে।তার যে ইট, সিমেন্ট বালির ব্যবসা আছে এই গুলো শুধু মাত্র লােক দেখানাে।২০১৩ সালে পুকারির বড় ছেলে রাজিব ৬০ গ্রাম হিরোইন ও ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় এবং সেই মামলায় রাজীবের ৩২ বছরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বর্তমানে রাজীব জামিনে রয়েছে। জামিনে এসে রাজীব পুনরায় তার আগের ব্যবসা বীর দর্পে চআলিয়ে যাচ্ছে। ২০০৩ সালে পুকারির মেজো ছেলে রাব্বুল ঢাকা যাওয়ার পথে,পিস্তল নিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় । ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েক বছর হাজতী খাটার পর বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।গত কয়েক দিন আগে পুকারি মেম্বারের ছোট ছেলে আবির মাহমুদ প্রান্ত ওরফে রিয়েল রকি কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের কাছে ৫২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি মোটরসাইকেল সহ গ্রেফতার হয়েছে। বর্তমানে রকি জেল হাজতে রয়েছে।এক সময় ছেঊড়িয়া মন্ডল পাড়ার এলাকাবাসী গড়াই নদী সংলগ্ন প্রায় ৬৫ বিঘা সরকারি খাস জমিতে চাষ করে যে অর্থ আসত তার অর্ধেক মসজিদে দিতেন বৎসরে ৬০/৭০ হাজার টাকা এবং অর্ধেক এলাকাবাসীরা ফসল ভাগ করে নিতেন।কিন্তু এলাকার মেম্বার হবার পর পুকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে মসজিদের নাম করে সরকারি খাস জমিতে লােক বসিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাধ করছে। এই ভাবে পুকারি ৫০ থেকে ৬০ জন কে বসিয়ে তাদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাধ করছে।এসব জমি বিক্রয়ের কাজে পুকারীকে সাহায্য করেছে কেন্টু,আজম, চাঁদু, চয়েন, হারেজ, সহ আরও অনেকেই।এসব ব্যাপারে কোন লােক যদি কথা বলে তাহলে তাকে মেরে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেয় পুকারীর লোকজন। ছেঊড়িয়া এলাকার মানুষ পুকারির কাছে জিম্মি।শুধু তাই নয় পুকারী এক সময় র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হামিদুল ও আক্তারের সাথে একত্রিত হয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন এবং তাদের যৌথ ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পুকারী হামিদুল ও আক্তারের সাথে একত্রিত হয়ে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে শুরু করে। সে সময় কুষ্টিয়া বড় ষ্টেশনের পাশে পতিতালয় ছিলো এবং সেই পতিতালয়ের সাধারন সম্পাদক ছিলেন এই নুর মোহাম্মদ পুকারী।পুকারী ছেউড়িয়া মন্ডলপাড়ার বাটুল,মাখন, জিন্নাকে দিয়ে হিরােইনের ব্যবসা করিয়েছে। মিলপাড়া ইট ভাটার এক সময়ের মাদক সম্রাজ্ঞী আলেয়াকে দিয়ে হিরােইন ও মেয়ের ব্যবসা করাতো। ছাত্তার চোর ও তাদের দল বল দিয়ে ট্রেন থেকে কাপড় লুঙ্গী,কুমারখালী ও পুরাদহ হাটের দিনে ট্রেন থেকে জোর করে চুড়ি করে মালামাল নামিয়ে নিতো।মিলপাড়া রেল কোয়াটার ভেঙ্গে ইট বিক্রয় করেছে।আই ডাবলু অফিস থেকে লৌহা এবং নাইট গার্ডকে রাত্রিতে বেধে জোর করে মালামাল বের করে নিয়েছে। রেলের জমি প্লট করে তােক বসিয়ে টাকা নিতো। এই ভাবে রাতারাতি পুকারি হামিদুল ও আক্তার টাকার মালিক হয়ে উঠেন। ইতি মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট মন্ত্রী মােহাম্মদ নাসিম সন্ত্রাসীদের কে সুযােগ দিলেন যে আত্মসমর্পন করলে তাদের কে ক্ষমার চোখে দেখা হবে। সে সময় অস্ত্র জমা দেবার সুযােগ করে দেওয়ার পর পুকারি, হামিদুল, ও আক্তার অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করেছিলেন। কিছুদিন জেল হাজত থেকে বেরিয়ে এসে আবারও তাদের পুরাতন অপকর্ম কাজে লিপ্ত হয়।পুকারি হামিদুল বাহিনীর সাথে থাকা অবস্থায় চাদার টাকার জন্য ছেউড়িয়া কারিগর পাড়ার মুকুল কে ধরে নিয়ে যায়, সন্ধার পর ছেউড়িয়া কারিগরবপাড়ার জামে মসজিদের নিকট থেকে আজও পর্যন্ত তার লাশ ও পাওয়া যায় নাই। ছেঊড়িয়া মন্ডল পাড়ার সোনপাপড়ী ব্যবসায়ী মৃত- শাহাবুদ্দিন আহমেদের ছেলে শওকত আলীকে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়াতে তাকে ছেউড়িয়া মন্ডলপাড়ার আলিমদ্দীনের দোকানের কাছে সন্ধ্যার পর গুলি করে হত্যা করে পুকারি। এরপর জয়নাবাদ এলাকার আনুকে পুকারি তুলে নিয়ে যায় এবং কয়েকদিন পর আনুর লাশ গড়াই নদীতে পাওয়া যায়। মাদক ব্যবসার দন্ড ধরে ছেঊড়িয়া মন্ডল পাড়া এলাকার মৃত আজাদ আলীর ছেলে খেদুকে পায়ে গুলি করে এই পুকারি পরে খেদুর পা কেটে ফেলা হয়।সে এখন পঙ্গ অবস্থায় চলাচল করে।এই সবগুলিতে পুকারির নামে মামলা হলেও সবাই ভয় পেয়ে পুকারির বিরুদ্ধে কেউ যায়না। বর্তমানে হামিদুল ও আক্তার র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হবার পর থেকে পুকারী এখন নিজেই অপরাধ জগতের ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে। তাই এলাকার সাধারন জনগনের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো বিবেচনা করে ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন।