পাবনা প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠাপুলি খাবারের মত কুমড়ো বড়ির বেশ কদর রয়েছে। তাই শীত আসতেই সুস্বাদু খাদ্য কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। শীত মৌসুমে কুমড়ো বড়ির চাহিদাটা একটু বেশি, এ ছাড়াও কুমড়ো বড়ি ব্যবসায়ীরা মনে করেন আগাম কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বিক্রি করলে দাম বেশি পাওয়া যায়। এ অঞ্চলের কুমড়ো বড়ির চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও আগাম কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়েছে চাটমোহর উপজেলার কারিগর ও ব্যবসায়ীদের।
সরেজমিনে উপজেলার দোলং, হান্ডিয়াল টিবাপাড়া ও মাশকাটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ি সাড়ি কুমড়ো বড়ি তৈরি করে শুকানোর জন্য রোদে দিচ্ছেন নারীরা। শুকানোর কাজে নারীদের পাশাপাশি পুরুষও কাজ করছেন।
জানা যায়, ভাগ্য উন্নয়নে গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষের অনেকেই অনেক বছর ধরে কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। কুমড়ো বড়ি তৈরি করে তাদের পরিবারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। উপজেলার প্রায় ৫০টি পরিবার এই কুমড়ো বড়ি তৈরি কাজের সাথে নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিটি পরিবারের ছেলে মেয়ে এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে। এক সময়ের ভূমিহীন অনেক পরিবার জমি কিনে নতুন টিনের আধাপাকা ঘর তুলেছেন। অভাব কাটিয়ে সচ্ছলতা এনেছেন সংসারে।
দীর্ঘদিন এ পেশার সাথে জড়িত হান্ডিয়াল মাশকাটা গ্রামের আলেয়া বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, শীতকাল কুমড়ো বড়ি তৈরির মৌসুম। আমাদের এখানে অনেক নারী কারিগর কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। শীতের আগমণের সঙ্গে সঙ্গে কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে ব্যস্ততা বেড়ে যায় আমাদের। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন এই ৬ মাস কুমড়ো বড়ি তৈরি করে থাকি আমরা। তাছাড়া আগে আমরা সনাতন পদ্ধতিতে ডাল ভিজিয়ে শিল-পাটায় পিষে কুমড়ো বড়ি তৈরি করতাম, এখন আমাদের আগের মতো আর কষ্ট করতে হয় না। এখন মেশিনের সাহায্য কুমড়ো বড়ির ডাল ফিনিস করে থাকি। শুধু হাত দিয়ে বানাতে হয় বড়িটি। এখন আমাদের পরিশ্রম কম করতে হয়। ২০ বছর যাবত কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন বলে জানান তিনি।
কুমড়ো বড়ি তৈরির কারিগর হান্ডিয়াল টিবাপাড়া গ্রামের নুরুন্নাহার বলেন, বছরের ৬ মাস আমরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে থাকি, বাঁকি মাস গুলোতে অন্য কাজ করি। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের অবস্থা আগে অনেক খারাপ ছিলো, এখন বছরের ৬ মাস কুমড়ো বড়ির ব্যবসা করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। নুরুন্নাহার বলেন, প্রতি কেজি অ্যাংকর ডালের বড়ি বানাতে সব মিলিয়ে আমাদের খরচ হয় প্রায় ৫০-৬০ টাকা। আমরা প্রতি কেজি কুমড়ো বড়ি ৭০-৮০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করে থাকি, তবে বড়ির মানভেদে হাটে বাজারে খুচরা বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
মাশকাটা গ্রামের আতাউর রহমান বলেন,আগে সবরকম বড়ি বানানো হতো। অনান্য ডালের দাম বেশি হওয়ায় এখন শুধু অ্যাংকর ডালের বড়ি বানানো হয়। ডাল ও মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় কুমড়ো বড়ি তৈরিতে খরচ বেশি পড়ছে। ফলে হিমসিম ক্ষেতে হচ্ছে আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীদের। তাই স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
স্থানীয়রা এই ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবারটি তৈরিতে কারিগরদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করার কথা জানান। স্থানীয়রা বলেন, শীত মৌসুম আসলে এই উপজেলার নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করে থাকে। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।