স্টাফ রিপোটার: রাজধানীর পল্লবীর ইষ্টার্ণ হাউজিং লিমিটেডের একটি বৃহৎ আবাসন প্রকল্প পল্লবী ২য় পর্ব আবাসিক এলাকার পাশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রাডার কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০০৭ সাল থেকে অত্র এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন ভবনের নির্মাণ অনুমোদন চারতলার উপরে দিচ্ছে না । তাই ওই এলাকার কোন প্লট ও ডেভেলপার কোম্পানীর মালিক ভবন নির্মাণে বড় আকারে বিনিয়োগ করছে না। যার ফলে অত্র এলাকার কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। দীর্ঘদিন যাবৎ ওই এলাকার মানুষজনরা অযত্ন ও অবহেলায় চরম খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের আগে এই এলাকায় রাজউক কর্তৃপক্ষ অসংখ্য ভবনের নির্মাণ অনুমোদন দিয়েছে ছয়, সাত এমনকি আটতলা পর্যন্ত । যেসব ভবন আজ দন্ডায়মান। সেসব ভবনের জন্য রাডার কেন্দ্রের টাওয়ার কিংবা বিমান চলাচলে কোন সমস্যা হয়নি। এর আগে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী রাডার কেন্দ্রের টাওয়ারের উচ্চতা ৪৫ ফিট থাকায় পল্লবী ২য় পর্বে ভবনের উচ্চতা ৪০ ফিট রেখে অনুমোদন দিতে রাজউক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায় । এরপর থেকে রাজউক কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় কোন ভবনের অনুমোদন চারতলার উপরে দেয় না। এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য প্লট ও ডেভেলপার কোম্পানীর মালিক দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই তারা বিষয়টি সুরাহা করতে পারছিল না। এমতাবস্থায় অত্র এলাকার জনদরদী নেতা ঢাকা- ১৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ২০১৯ সালের ৩১শে জুলাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির ৩য় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেন এবং যথাযথ নিয়মে উক্ত রাডারের টাওয়ারটি উঁচু করার অনুমোদন নিয়ে আসেন।সভায় তিন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে রাডারের টাওয়ারের উচ্চতা ৯০ ফিট সম্পন্ন করা হয়ছে এবং ফ্রান্সের কারিগরি সহায়তায় আরও একটি ১৫০ ফিট উচ্চতার রাডার টাওয়ারের নির্মানকাজ চলছে।
সরজমিন গিয়ে জানা যায়, ইষ্টার্ণ হাউজিং কোং লিমিটেডের আবাসন প্রকল্প পল্লবী ২য় পর্ব আবাসিক এলাকা ১৯৮৭ সালে ৩৫০ একর জমির উপর শুরু হয়। এরপর প্রকল্পটি রাজউক থেকে বেশ কয়েকবার অনুমোদন পাওয়ার পর সর্বশেষ অনুমোদন পায় ২০১৫ সালে। এই অনুমোদনের শর্ত হল অত্র আবাসিক এলাকার অভ্যান্তরে রাস্তার জন্য ৭৪ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য ২৮ একর জমি দিতে হবে। কিন্তু ইষ্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষ এ শর্ত অনুযায়ী কাজ করছে না বলে অভ্যন্তরিন রাস্তা ও উন্নয়নকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
জানা যায়, ইষ্টার্ণ হাউজিং কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত রাস্তার জন্য ১৫ একর জায়গা অফিসিয়ালী ডিএনসিসিকে হস্তান্তর করেছে। বাকীটা কবে দেবে তা জানা যায়নি।এরপরেও ডিএনসিসি ২০১৬ সালে চারশত কোটি টাকা রাস্তা ও উন্নয়নকাজ করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু ইষ্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় সেটা হয়নি। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মালিকদের সংগঠন বাড়ি ও ফ্ল্যাট মালিক সমিতি ও ঢাকা- ১৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৯৭৮ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প ডিএনসিসির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন আছে।
সরেজমিন আরো জানা যায়, এই এলাকায় দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ কোন রাস্তা পিচ দিয়ে ঢালাই করা হয়নি। পুরো এলাকার রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। সেইসাথে পয়নিস্কাশন, ড্রেনেজ, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও চিত্ত- বিনোদনের স্থান সংকুলনসহ নানা সমস্যায় জর্জড়িত। পুরো এলাকার রাস্তাঘাট শুষ্ক মৌসুমে যেমন ধুলার রাজ্যে পরিণত হয় তেমনি বর্ষাকালে থাকে কাঁদাজলে ভরপুর। লক্কর ঝক্কর মার্কা এসব রাস্তা দিয়ে অসুস্থ কাউকে নিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। ঢাকার মত একটা জায়গায় এমন রাস্তা দেখলে মনে হয় যেন কোন অজ পাড়াগাঁয়ের রাস্তা। এসব ঝুঁকিপূর্ন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাফেরা করছে।
এ ব্যপারে পল্লবী ২য় পর্ব বাড়ি ও ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি ক্যাপ্টেন মোঃ আবুল কাশেম (অব.) বলেন, জাতীয় বোটানিক্যল গার্ডেনের উত্তরে ও ঢাকা প্রতিরক্ষা বাঁধের পূর্ব পাশে অবস্থিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রাডার কেন্দ্রের টাওয়ারের উচ্চতা ৪৫ ফিট হওয়ায় পল্লবী ২য় পর্ব আবাসিক এলাকায় ৪০ ফিট উচ্চতার বেশি কোন ভবনের অনুমোদন দিচ্ছে না রাজউক কর্তৃপক্ষ। এতে অত্র এলাকার উন্নয়ন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করা পাটোয়ারী প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আলম পাটোয়ারী ওরফে বুলবুল পাটোয়ারী বলেন, রাজউক এই এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন না দিলে কোন ডেভেলপার কোম্পানী এখানে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করবে না। আর বিনিয়োগ না করলে এই এলাকায় কখন উন্নয়ন হবে না। এ এলাকা দীর্ঘদিন যাবৎ অবহেলিত ছিল আজও আছে এবং ভবিষ্যতে কি হবে জানি না। তবে আমি এ এলাকার দীর্ঘদিন ধরে মানুষের ভালোবাসার টানে ব্যবসা করছি। কোন লাভ লসের কথা চিন্তা করে নয়।
এ ব্যপারে ঢাকা- ১৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করলে বৈঠকে উপস্থিতদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাডারের উচ্চতা ৪৫ ফিটের স্থলে ৯০ ফিট করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এই সিদ্ধান্তের পর উক্ত রাডারের উচ্চতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। আশা করছি, রাজউক এবার তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে এবং অত্র এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেবে।
ওই এলাকার সকল প্লট ও ডেভেলপার কোম্পানীর মালিকদের একটাই প্রাণের দাবী, রাজউক কর্তৃপক্ষ যেন, পূর্বের মত একইভাবে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়।