অনলাইন ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উঠতে বসতে কংগ্রেসকে ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে খোঁচা দেন। দলে ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ন্ত্রণে কংগ্রেস এবার নীতিনির্ধারণী শিবিরে ‘এক পরিবার, এক প্রার্থী’ নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। কিন্তু তাতে এমনই ছাড় রাখা হচ্ছে যে, গান্ধী পরিবার-সহ কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতার পরিবারই এর আওতায় আসবে না।
রাজস্থানের উদয়পুরে কংগ্রেসের নীতিনির্ধারণী শিবিরে যে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের খসড়া নিয়ে আলোচনা চলছে; তাতে বলা হয়েছে, একটি পরিবার থেকে এক জনকেই ভোটে প্রার্থী করা হবে।
তবে কোনো কংগ্রেস নেতার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা বা অন্য কোনো আত্মীয় গত পাঁচ বছর দলের হয়ে কাজ করে থাকলে তার প্রার্থী হতে বাধা থাকবে না। এর সুবাদে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, দু’জনেই প্রার্থী হতে পারেন।
সোনিয়ার পাশাপাশি রাহুল গত ১৮ বছর ধরে কংগ্রেসে কাজ করছেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক হন। ফলে ২০২৪ সালে তারও রাজনীতিতে পাঁচ বছর আনুষ্ঠানিকভাবে থাকার শর্ত পূরণ হয়ে যাবে। চাইলে তিনিও আগামী লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে পারেন।
নীতি নির্ধারণী শিবিরের শুরুতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী মেনে নিয়েছেন, দলের সংগঠনে এত করুণ দশা আগে হয়নি। তার মন্তব্য, দলের সংগঠনের সামনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা অভূতপূর্ব। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মোকাবিলা অসাধারণ পদ্ধতিতেই করা সম্ভব। এ বিষয়ে আমি পুরোপুরি সচেতন।
এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও পরিবারতন্ত্র একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব নয় বলেই কংগ্রেস নেতাদের মত।
কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অজয় মাকেন বলেন, এক পরিবার থেকে একজনকেই টিকিট দেওয়ার সূত্রে প্রায় সকলেই একমত। পরিবারের দ্বিতীয় কেউ যদি গত পাঁচ বছর দলের জন্য স্বকীয়তার সঙ্গে কাজ করে থাকেন, তাহলে নিয়মের ব্যতিক্রম হবে। প্রবীণ নেতারা নিজেরা প্রার্থী না হয়ে হঠাৎ করে তাদের বাড়ির কাউকে প্রার্থী করতে চাইবেন, তা হবে না।
ঘটা করে নতুন নিয়ম চালু হলেও কংগ্রেস নেতারা মেনে নিচ্ছেন, ব্যতিক্রম রাখার ছাড় থাকায় ভবিষ্যতে দিগ্বিজয় সিংহ, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা, পি চিদম্বরম, এ কে অ্যান্টনি, মল্লিকার্জুন খড়গে, হরিশ রাওয়াত, মীরা কুমার, কারো ছেলেরই প্রার্থী হতে আটকাবে না।
কারণ দিগ্বিজয়ের ছেলে জয়বর্ধন, ভূপেন্দ্রর ছেলে দীপেন্দ্র, চিদম্বরমের ছেলে কার্তির মতো সকলেই পাঁচ বছরের বেশি সময় রাজনীতি করছেন। কংগ্রেসের যুক্তি, বিজেপিতেও বহু নেতার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সাংসদ-বিধায়ক হয়েছেন।
পরিবারতন্ত্রর শিকড় উপড়ে ফেলতে না পারলেও চিন্তন শিবির থেকে কংগ্রেসের সংগঠনে একটা ঝাঁকুনি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিছু ক্ষেত্রে বিজেপির ধাঁচেই সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা হচ্ছে।
সোনিয়া বলেছেন, এই সংগঠনকে জিইয়ে রাখতে হলে, বাড়াতে হলে, সময়ে সময়ে নিজের অন্দরে পরিবর্তন আনতে হবে। রণনীতিতে বদল, কাঠামোগত সংস্কার, রোজকার কাজের পদ্ধতির বদল— এ সব ক্ষেত্রে আমাদের সংস্কার অতীব জরুরি।
সংগঠনে নতুন রক্ত আনতে কংগ্রেসের ভাবনা, জাতীয় থেকে রাজ্য কমিটিতে কোনো ব্যক্তি সর্বাধিক পাঁচ বছরের জন্য এক পদে থাকতে পারবেন। ওই পদে ফিরতে চাইলেও তাকে মাঝে তিন বছরের বিরতি নিতে হবে। ৫০ শতাংশ পদে ৫০ বছরের কমবয়সিদের নিয়োগ করা হবে।
নিচু তলায় সংগঠন শক্তিশালী করতে কংগ্রেসের বুথ কমিটি ও ব্লক কমিটির মাঝে মণ্ডল কমিটি তৈরি করা হবে। এখন কংগ্রেসের বুথ কমিটির উপরই ব্লক কমিটি, তার উপরে জেলা কমিটি থাকে। অথচ বিজেপিতে বুথ কমিটির উপরে শক্তি কেন্দ্র, তার উপরে মণ্ডল কমিটি, তার উপরে জেলা কমিটি থাকে। কংগ্রেসও প্রায় একই ধাঁচে বুথ কমিটির উপরে মণ্ডল কমিটি আনতে চলেছে।
সূত্র: আনন্দবাজার।