Tuesday , 4 March 2025
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
পবিত্র রমজান মাস যেভাবে কাটাবেন

পবিত্র রমজান মাস যেভাবে কাটাবেন

অনলাইন ডেস্কঃ

রমজান শুধু একটি মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম ও রহমতের এক অপার সুযোগ। এই মাসের প্রতিটি দিন যেন এক অনন্য প্রতিশ্রুতি, সংযমের শৃঙ্খলে অভ্যস্ত হয়ে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের। রমজানের প্রতিটি রাত তারার স্নিগ্ধ আলোয় মাখা, মনে করিয়ে দেয় লাইলাতুল কদরের রহমতপূর্ণ মাহাত্ম্য। তাই মুমিনের উচিত রমজানকে স্বাগত জানানো—পরিশুদ্ধ হৃদয়ে, পরম নিষ্ঠায়, দয়া ও উদারতার আলোকচ্ছটায়।

যেভাবে রমজান কাটাব

কিভাবে আমরা রমজান কাটাব, তা হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো—

১. রোজা রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেছেন : আদমসন্তানের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই; রোজা ব্যতীত। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রোজা পালনকারীদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে অধিক সুগন্ধযুক্ত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)

২. তারাবি পড়া : আবদুল্লাহ ইবনে আবি কাইস (রা.) বলেন, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেছেন, তুমি রাতের নামাজ (তারাবি) ছেড়ে দেবে না।

কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো একে পরিত্যাগ করতেন না। তিনি (সা.)  অসুস্থ হলে কিংবা অলসতা বোধ করলে বসে নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩০৭)৩. দান-সদকা করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন, আর অন্যজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৪২)৪. তিলাওয়াত করা : আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে তোমরা কোরআন মজিদ পাঠ করো। কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আগমন করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮০৪)

৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন,  প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সেই ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা বজায় রাখে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯১)

৬. জামাতে নামাজ আদায় করা : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের প্রতি যত্নবান হবে, কিয়ামতের দিন তা হবে তার জন্য নুর ও সাক্ষী এবং কিয়ামতের দিন নাজাতের মাধ্যম।

(সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৪৬৭)৭. উত্তম আচার-ব্যবহার করা : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) রোজা পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)

৮. নিয়ত বিশুদ্ধ করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা করে অথচ সম্পাদন করেনি, তার জন্য একটি সওয়াব লেখা হয়। আর যে ইচ্ছা করার পর কার্যত সম্পাদন করে, অনন্তর তার ক্ষেত্রে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করে আর তা না করে, তার কোনো গুনাহ লেখা হয় না; আর তা করলে (একটি) গুনাহ লেখা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৯১)

৯. আত্মশুদ্ধি : নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সেই গোশতের টুকরাটি হলো কলব (অন্তর)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২)

১০. খাঁটি তাওবা করা : আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন, যেন দিবসের অপরাধী তাঁর নিকট তাওবা করে; এমনিভাবে দিনে তিনি তাঁর নিজ হাত প্রশস্ত করেন, যেন রাতের অপরাধী তাঁর নিকট তাওবা করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৫৯)

১১. পরিবারের প্রতি সদয় হওয়া : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন,  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা কোনো পরিবারে কল্যাণ দিতে চান, তখন তাদের মাঝে কোমলতা ও সৌজন্য দান করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৪৭১)

১২. অন্যকে সহায়তা করা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে লোক কোনো মুমিনের দুনিয়া থেকে কোনো মুসিবত দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসে তার থেকে মুসিবত সরিয়ে দেবেন। যে লোক কোনো দুঃস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। যে লোক কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)

১৩. হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করা : মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের মধ্যরাতে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, তবে তিনি মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬৫)

১৪. অধিক নফল ইবাদত করা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

১৫. সময়ের প্রতি লক্ষ রাখা : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন দুটি নিয়ামত আছে, যাতে বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)

১৬. ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীল হওয়া : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে নম্রতার সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় করে এবং পাওনা ফিরিয়ে দেয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৭৬)

১৭. ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করা : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের ভালোবাসেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ করে আর তা সুচারুভাবে সম্পন্ন করে। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৩৮৬)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে উল্লিখিত বিষয়গুলো মান্য করে রমজান মাস কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply