পবিত্র কোরআনে ২১ ধরনের পানির কথা উল্লেখ আছে। আমরা এ প্রবন্ধের মাধ্যমে পানির প্রকারভেদ ও মহান রবের সৃষ্টির মহিমা উপলব্ধির চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
১. মাউল মুগিজ : এটি এমন পানি, যা আসমান থেকে বর্ষিত হয়ে মাটির ভেতর বিলীন হয়ে যায়। কোরআনের ভাষায়, ‘হে পৃথিবী, তোমার পানি গিলে ফেলো আর হে আকাশ, ক্ষান্ত হও।
৩. মাউল মুহলি : এটি গাঢ়, ঘোলা পানি অথবা তৈলাক্ত পানিকে বোঝানো হয়েছে।
৬. শরাব : পানযোগ্য সুপেয় পানি। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান করো।
আরো বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করলে তাকে নোনা করে দিতে পারি, তবু তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না?’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৭০)
৮. মাহিন : মাহিন মানে তুচ্ছ। আল্লাহর বাণী, ‘অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ৮)
৯. গাইরু আসিন : আল্লাহ জান্নাতিদের যে পানি দান করবেন সেই পানির রং, স্বাদ কিংবা গন্ধ বিস্বাদযুক্ত হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর, যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়।’ (সুরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৫)
১০. হামিম : যা উত্তপ্ত পানি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের ফুটন্ত পানি পান করতে দেওয়া হবে, অতঃপর সে পানি তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেবে।’ (সুুরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৫)
১১. মোবারক : বরকতপূর্ণ পানি, যার মাধ্যমে জমিনকে পুনর্জীবিত করা হয় এবং জমিন সবুজ-শ্যামল পরিবেশ আমাদের দান করে। কোরআনের ভাষায়, ‘আমি আসমান থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা দ্বারা বাগান ও শস্য উদগত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।’ (সুরা : ক্বফ, আয়াত : ৯)
১২. মুনহামির : আসমান থেকে আল্লাহ কখনো কখনো প্রবল বর্ষণ করেন। যেমন তিনি বলেন, ‘আমি খুলে দিলাম আকাশের দ্বার প্রবল বারি বর্ষণের মাধ্যমে।’
(সুরা : ক্বমার, আয়াত : ১১)
১৩. মাসকুব : মাসকুব বলা হয় প্রবাহিত পানিকে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আমি প্রবাহিত পানি দান করি।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩১)
১৪. গাওর : যে পানি ভূগর্ভে চলে যায় এবং সংগ্রহ করা যায় না। কোরআনের ভাষায়, ‘অথবা সকালে তার (মাটির) পানি শুকিয়ে যাবে। অতঃপর তোমরা তা তালাশ করে আনতে পারবে না।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪১)
১৫. মাঈন : যে পানি জমিনে প্রবাহিত হয় এবং মানুষ তা দ্বারা উপকৃত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায় তবে কে তোমাদের সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২৯)
১৬. গাদাক : প্রচুর পানিকে গাদাক বলা হয়। আল্লাহর বাণী, ‘যদি তারা সত্য পথে প্রতিষ্ঠিত থাকত, তবে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি বর্ষণে সিক্ত করতাম।’
(সুরা : জিন, আয়াত : ১৬)
১৭. ফুরাত : সুমিষ্ট পানি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আমি তাতে স্থাপন করেছি মজবুত সুউচ্চ পর্বতমালা এবং পান করিয়েছি তোমাদের তৃষ্ণা নিবারণকারী সুপেয় পানি।’ (সুরা : মুরসালাত, আয়াত : ২৭)
১৮. ছাজ্জাজ : তথা মুষলধারে বর্ষিত পানি। কোরআনের বাণী, ‘আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি।’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ১৪)
১৯. দাফিক্ব : সবেগে স্খলিত পানি। কোরআনের ভাষায়, ‘সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।’ (সুরা : ত্বরিক, আয়াত : ৬)
২০. আনহার ওয়াল ইয়ানাবি : তথা নদী ও ঝরনার পানি। আল্লাহর বাণী, ‘আপনি কি দেখেননি যে আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি জমিনের ঝরনাসমূহে প্রবাহিত করেছেন?’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ২১)
২১. সালসাবিল : এ পানি অত্যন্ত মসৃণ এবং মিষ্টতার কারণে গলা দিয়ে যাওয়া সহজ। এটি জান্নাতে ‘সালসাবিল’ নামক ঝরনা থেকে উৎপন্ন হয়। আল্লাহ বলেন, ‘এটি জান্নাতস্থিত সালসাবিল নামক একটি ঝরনা।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ১৮)
আল্লাহ আমাদের জান্নাতের সালসাবিল পান করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষক, প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী।