অনলাইন ডেস্ক:
হতে পারে পদ্মা সেতুই দেশের প্রথম সবচেয়ে বড় এবং শেষ বড় অবকাঠামোর সেতু। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় নদীর ওপর বড় ধরনের সেতু অবকাঠামো করতে চায় না সরকার। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে নদীর ওপর দিয়ে সেতুর বদলে পানির নিচ দিয়ে টানেল করাই এখন লক্ষ্য। এতে নদীর পরিবেশ-প্রতিবেশ বেশি করে রক্ষা করা সম্ভব হবে। সেতু নির্মিত হলে পলি পড়ে নদীর বড় ধরনের ক্ষতি হয়। তাই পরবর্তী সময়ে পদ্মা ও যমুনার মতো বড় নদী পারাপারে সেতুর বদলে টানেলের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে সরকার। জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকারও রয়েছে।
এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘নদীর ওপর সেতু হলে কিছু তো প্রভাব পড়েই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তাই আমাদের পরিকল্পনায় আছে সেতুর বিকল্প হিসেবে টানেল করার।’
বেলায়েত হোসেন আরো বলেন, ‘সেতুর চেয়ে টানেলে খরচ অনেক বেশি। সবদিক চিন্তা করেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সরকার। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতটা বাস্তবসম্মত হবে তা এখনই বলা কঠিন, তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে।’
পদ্মা ও যমুনায় আর কোনো সেতু বানানোর পরিকল্পনা নেই বলে এর আগে জানিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গত বছর সুনামগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, পরিবেশ রক্ষায় বড় নদীতে সেতুর বদলে মাটির নিচ দিয়ে টানেল বানানো হবে। তাঁর কথা অনুযায়ী, পদ্মা-যমুনায় বা বড় নদীতে সরকার আর সেতু নির্মাণ করতে চায় না। সেতু নির্মিত হলে পলি পড়ে, নদী ভরাট হয়, এভাবে পরিবেশের ক্ষতি হয়।
ওই সময় পরিকল্পনামন্ত্রী দেশের প্রথম টানেল চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের উদ্যোগও ওই চিন্তা থেকেই করা বলে জানান। প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ওই টানেল সেতু করছে সরকার। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলের খননকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রথম এই টানেল সেতুটি হচ্ছে চার লেনের। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ টানেলের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীতে আরেকটি টানেল পথ করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। যেটি জামালপুর ও কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকারের এমন চিন্তা ভালো ইঙ্গিত বহন করে। পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার বিষয়ে বর্তমান সরকার গুরুত্ব দেয়। ২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে পৃথক একটি অনুচ্ছেদ যোগ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী দলিল সংবিধানে জীববৈচিত্র্য রক্ষার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সংবিধানের ১৮-ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’
সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি অনেক পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে বড় নদীতে সেতুর বদলে টানেলের বিষয়টিও আছে। তিনি আরো বলেন, ‘একটি পরিকল্পনা অনেক ধাপ পার হওয়ার পর চূড়ান্ত হয়। এ বিষয়ে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা কতটুকু বাস্তবসম্মত তা বুঝতে আরো সময় লাগবে। এ বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির ওপর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নির্ভর করে।’