দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চায় নতুন নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি। এই লক্ষ্যে তারা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদনও করেছে।
গতকাল বুধবার তৃণমূলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রতীকের বাইরে যদি নৌকা প্রতীক নিয়ে কেউ নির্বাচন করতে চায়, তাতে কোনো সমস্যা নেই।’
ইসি সূত্রে আগে জানা গিয়েছিল, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না পাওয়া প্রগতিশীল ইসলামী জোটের প্রার্থীরা তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে তাদের দলীয় প্রতীক সোনালি আঁশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
তৃণমূল বিএনপির আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করার খবরে তৈমুর আলম খন্দকারের নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে বলেছে, দলীয় স্বার্থে প্রয়োজন হলে যেন তৃণমূল বিএনপি বা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের অন্য জেলা থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা দেশে ২৫০টি আসনে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছেন তাঁরা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে সাবেক এমপি, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান, আমলা রয়েছেন।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরো বড় ধরনের চমক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক ত্যাগী নেতা তৃণমূল থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি গত মঙ্গলবার আমার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-২ ও ৩ আসন থেকে আবু হানিফ হৃদয়, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে অ্যাডভোকেট আলী হোসেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে অ্যাডভোকেট ভাসানী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের প্রতিটি আসন থেকেই আমাদের তিন থেকে পাঁচজন করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়েছি, সেহেতু জোটপ্রধান শেখ হাসিনা আমাকে এবং আমাদের দল থেকে যাকে যে আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তা মেনে নেব। ইসিতে আবেদন করে আমরা জোটভুক্ত হয়েছি।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে নির্বাচনী জোট গঠন করে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারে। জোটভুক্ত দলগুলো জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারে।
তৈমুর আলম খন্দকার এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। এই আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়াও। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই আসনের এমপিকে মন্ত্রী হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন হয়েছে যৎসামান্য। মন্ত্রীর লোকজন ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি ও খুনাখুনি করে পুরো সময় পার করেছে। এবার এই আসন থেকে দলের ত্যাগী কর্মী হিসেবে আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’
তিনি বলেন, এখানে তৃণমূল বিএনপিকে মানুষ মেনে নেবে না। তৃণমূলকে মানুষ বয়কট করবে।
আর পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আমি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দল থেকে আমাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবে। তৃণমূল বিএনপিকে রূপগঞ্জের মানুষ মেনে নেবে না।’
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বাবু ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এ কে এম শামীম ওসমান বর্তমান সংসদ সদস্য।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘আমরা এ বছর পাঁচটি আসনেই নৌকা প্রতীক চাই। জাতীয় পার্টি কিংবা তৃণমূল কাউকে দলীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। আমাদের দলীয় সংসদ সদস্য এবং যাঁরা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করতে চান, তাঁরা সবাই এলাকায় জনপ্রিয়। তৃণমূল বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টিকে অন্য যেকোনো জেলা থেকে দলীয় স্বার্থে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আমরা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছি।’
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির সভাপতি এবং ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।