নোয়াখালী প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইলে এক কিশোরীর ভালোবাসার টানে ছুটে যাওয়া নোয়াখালীর কিশোরীকে (১৭) মানসিক ডাক্তার দেখাবেন প্রতিবন্ধী দিনমজুর বাবা আবু তাহের। তিনি বলেন, প্রতিবেশীরা একেকজন একেক কথা বলছে।
গতকাল মেয়েটা বাথরুমে ঢুকে নিজের হাত কেটে ফেলেছে। পরে ডাক্তার দেখানোর পর তিনি মানসিক ডাক্তার দেখাতে বলেছেন। তাই মেয়েকে আগামীকাল শুক্রবার (২৫ মার্চ) মানসিক ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব।
বিকেলে নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্বলক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের কিশোরীর বাড়িতে গেলে দিনমজুর বাবা এসব কথা বলেন।
আবু তাহের আরও বলেন, সবারই সন্তান আছে। কার ছেলে-মেয়ে কি হবে কেউ জানে না। সবার পক্ষে তাদের ছেলে-মেয়েকে দেখে রাখা সম্ভব হয় না।
কিশোরীর মা মায়া বেগম বলেন, মাস খানেক আগেও সে ওই মেয়ের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ চলে যায়। পরে ওখানকার গ্রামবাসী খবর দিলে পুলিশের সহায়তায় আমার ছেলে তাকে নিয়ে আসে। পরশু পাশের বাড়ি থেকে ডিম কিনতে গিয়ে আবারো পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাজারের ব্যাগে করে পরনের কাপড় নিয়ে যায়। এবার আমরা বলেছি তাকে আর নিয়ে আসব না। পরে চেয়ারম্যানের অনুরোধে তাকে এনেছি।
তিনি আরও বলেন, গতকাল সকালে বাড়ি আসার পর ভাত ও ওষুধ খাওয়ার পর সে ঘুমায়। দুপুরে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নিজে হাত কেটে রক্তাক্ত করে। পরে তাকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হয়। আজ সকাল থেকে সে ভালো আছে। স্বাভাবিক আছে।
এক পর্যায়ে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমাদের ভাগ্যে যা আছে তা হয়েছে। আপনারা আমাদের বাসায় আসবেন না। আমার ঘরে চাল নাই। আমরা খেয়ে না খেয়ে থাকি। আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী। এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমরা পছন্দ করছি না।
ওই কিশোরী বলেন, ফেসবুকে টাঙ্গাইলের ওই কিশোরীর সঙ্গে পরিচয় হয়। একমাস আগে সে ঢাকায় এলে আমি নোয়াখালী থেকে ঢাকায় দেখা করি। এরপর ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ চলে যাই। পরে আমার পরিবার ওখান থেকে নিয়ে আসে। তার ফোন নম্বর আমার মুখস্থ ছিল। পরে আমার ভাবির ফোন থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাকে টাঙ্গাইল যেতে বলে। টাঙ্গাইল থেকে আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু মেয়েটি পরিবারের সঙ্গে আছে যেকোনো সুবিধা-অসুবিধা হলে আমাদের জানাতে পারবেন। আমরা যেকোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
প্রসঙ্গত, প্রেমের টানে সোমবার (২১ মার্চ) টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ময়থা গাছপাড়া গ্রামের এক কিশোরীর (১৫) বাড়িতে ছুটে আসে নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্বলক্ষ্মীনারায়ণপুরের আরেক কিশোরী। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দুই কিশোরীকে দেখতে ভিড় করে এলাকার লোকজন। এরপর গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল আলম বিজু তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।