Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

নোয়াখালীতে ২০ হাজারেরও বেশি ব্যাটারি চালিত রিক্সা- ভ্যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে

 নোয়াখালী প্রতিনিধি: দুর্ঘটনারোধে সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলবে না এবং প্যাডেল চালিত রিকশা ও ভ্যানে ব্যাটারি কিংবা মোটরযন্ত্র খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত হলেও নোয়াখালীর সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২০ হাজারেরও বেশি ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান। চলমান লকডাউন উপেক্ষা করেও এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান দখলে রেখেছে নোয়াখালী শহরের প্রধান সড়কসহ শহরের অলিগলি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা হলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুনরায় সড়কে চলাচল করছে ব্যাটারি চালিত এসব যানবাহন। 

ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানের সাথে সংশ্লিষ্ট চালক ও মালিকরা বলছেন, উৎপাদন এবং বিক্রয় বন্ধ না হলে কোনোভাবেই সড়ক থেকে এসব যানবাহন উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব না। কারণ এসব যানবাহনের সাথে জড়িত রয়েছে হাজার হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা।

নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ৮টি পৌরসভা সহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে গত কয়েক বছর ধরে চলতে শুরু করেছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানের পাশাপাশি বেশ কয়েক ধরনের যানবাহন। অবৈধ এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জেলার শহর-গ্রামের সড়কগুলোতে বিনাবাঁধায় চলাচল করছে। 

আর এসব ব্যাটারি চালিত যানবাহন জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলাগুলোতে সরবরাহ করছে চৌমুহনীর আরশি নগর অটো, নাসির অটো, হাজী অটো, মীম ট্রেডার্স, সিরাজ সাইকেল মার্ট, জেলা শহরের বিসমিল্লাহ অটো, আদনান অটো, আদিব অটো, কবিরহাটের আহাদ ট্রেইডিং, সুবর্ণচরের ফাহিম মটর্স ও সৌরভ অটো সহ অর্ধশত উৎপাদনকারী ও বিক্রয় কেন্দ্র। 

রিকশা-ভ্যান থেকে ব্যাটারি খুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন উৎপাদনকারী, বিক্রয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট মালিক ও চালকরা।

বিআরটিএ নোয়াখালী ও জেলা ট্রাফিক পুলিশের কাছে এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানের সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা জানান, শুধু নোয়াখালী পৌরসভা এবং চৌমুহনী পৌরসভার মধ্যেই প্রাই ১০ হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচল করছে। তাঁর মতে, নোয়াখালীর ৯টি উপজেলা ২০ হাজারেরও বেশি ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান করছে।

জেলা শহর মাইজদীর ব্যাটারি চালিত রিকশার মালিক মো. হাসানুর রহমান বলেন, গত বছর করোনা সময় কর্মহীন হয়ে পড়ে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং নিজের সঞ্চিত কিছু টাকা এক সাথ করে তিনটি ব্যাটারী চালিত রিকশা কিনে ভাড়া দিয়েছে।

প্রতিদিনের জমা টাকায় ঋণের কিস্তি পরিষোধের পাশাপাশি কোনোরকম সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছি। হঠাৎ রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত শুনে হতাশ হয়ে পড়েছি। কিভাবে সংসার চালাবো, ঋণটাও কিভাবে পরিষোধ করবো! কিছুই বুঝতে পারছি না। 

হাসানুর রহমানের মতো একইভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন, বেগমগঞ্জের চৌমুহনী করিমপুর এলাকার ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান মালিক আবদুর রশিদ, সুবর্ণচরের চরজব্বার ইউনিয়নের মাঈন উদ্দিন, সদর উপজেলার সোনাপুর এলাকার আলী হোসেন। 

তাঁরা বলেন, যদি অবৈধই হয়, তাহলে সরকার ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান সহ অন্যান্য যানবাহন কেন উৎপাদন ও বিক্রয় করার সুযোগ দিয়েছে। আগে ব্যাটারি চালিত এসব যানবাহন উৎপান ও বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। তাহলে সড়কে এসব যানবাহনের সংখ্যা কমে যাবে। 

ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক ইব্রাহিম খলিল, হেলাল উদ্দিন, কামাল হোসেন বলেন, আমাদের বিকল্প কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে ফেললে জীবিকা হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। ব্যাটারি চালিত রিকশা প্যাডেলে চালানোও যাবে না। করোনার এই মহামারিতে অন্য কোনো কাজের ব্যবস্থাও নাই। তাই এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে এসে বিকল্প চিন্তা করার আহবান জানান চালকরা।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বেগমগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম হারুন বলেন, ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানের পার্স আমদানী এবং উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ না করে রিকশা-ভ্যানের ব্যাটারি খুলে ফেলার ঘোষণা অত্যন্ত অমানবিক। সরকারের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে হাজার হাজার পরিবার মানবেতন জীবনের দিকে ধাবিত হবে। যা সমাজে চরম অস্থিরতা ও নৈরাজন্য তৈরি করবে। 

তিনি বলেন, দরিদ্র কর্মহীন মানুষ এনজিওসহ বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে ৬০/৭০ হাজার টাকা খরচ করে রিকশা কিনে চালিয়ে যখন জীবিকা চালাচ্ছে তখন সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোনক্রমেই শ্রমজীবী রিকশা চালক-মালিকরা মেনে নেবে না।

নোয়াখালী পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের টি.আই (প্রশাসন) মো. বখতিয়ার উদ্দীন বলেন, শহরের প্রধান সড়কসহ অতি-গলিতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সড়কে শৃঙ্খলনা ফিরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে। প্রতিদিনই অবৈধ এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তার মতে শুধু নোয়াখালী পৌরসভা এলাকাতেই পাঁচ হাজারের বেশি ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান রয়েছে। 

তিনি বলেন, ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান থেকে ব্যাটারি খুলে নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কোন চিঠি এখনো হাতে আসেনি। চিঠি ফেলে সিদ্ধান্ত কার্যকরে মাঠে কাজ করবে ট্রাফিক পুলিশ।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামছুন্নাহার বেগম বলেন, সড়ক পরিবহণ সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্সের ৩য় সভায় সড়ক মহাসড়কে দূর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব প্যাডেল চালিত রিকশা ও ভ্যানে ব্যাটারি/মোটরযন্ত্র লাগানো হয়েছে, সেই ব্যাটারি/মোটরযন্ত্র খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আমাদের কাছে এখনো চিঠি আকারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। চিঠি ফেলে তা কার্যকরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানের পার্স আমদানী এবং উৎপাদন ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ইউএনও শামছুন্নাহার বেগম বলেন, এটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয়। তারা কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা, তা আমি জানিনা। এখন যেহেতু এটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা পৌরসভার সাথে সমন্বয় করে পার্স আমদানীকারক এবং উৎপাদন ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।

নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিকুল আলম বলেন, রিকশা-ভ্যান থেকে ব্যাটারি খুলে নেয়ার বিষয়ে এখনো লিখিত কোন চিঠি পায়নি। চিঠি ফেলেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে। 

উৎপাদন ও বিক্রয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন উৎপাদন ও বিক্রয় করছেন, তারা লাইন্সেস নিয়ে করছেন। কোথা থেকে তারা লাইন্সেস গ্রহণ করেছেন এমন প্রশ্নে কোন মন্তব্য করেননি তিনি। 

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply