Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

নির্বাচনী সহিংসতায় অস্ত্রের আতঙ্ক দৌলতপুরে 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
২৮ নভেম্বর রোববার ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে। ১শ’৫১ টি কেন্দ্রে এদিন ৮ ঘণ্টা চলবে ভোট গ্রহন। ৮৯ জন চেয়ারম্যান এবং ৭শ’৯৮ জন মেম্বার পদপ্রার্থী এখন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় চালাচ্ছেন নিজের সাধ্যের সর্বোচ্চ প্রচারণা ও ভোট প্রার্থনার কাজ। এই উপজেলায় ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, বিএনপি’র স্বতন্ত্রসহ ভোটে অংশ নিচ্ছেন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা, এছাড়াও আছেন রাজনৈতিক দলের সাথে দাপ্তরিক ভাবে সম্পৃক্ত নয় এমন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তীব্র প্রতিদ্বন্দিতায় থাকা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে সহিংসতার নজির। ঘটেছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার, আর এতেই জনমনে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার।
গেল মঙ্গলবার ১৬ নভেম্বর রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে জাসদ প্রার্থী আব্দুল আজিজের মশাল ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিরাজ মনডলের নৌকা’র কর্মী সমর্থকদের মধ্যে তিন দফা সংঘর্ষ বাঁধে।  এদিন রাতে উপজেলার রামকৃষ্ণপুরে ভাগজোত বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়, একই দিনে একবার পদ্মার চরে এবং দু’বার সংঘর্ষ হয় ভাগজত বাজার এলাকায়। সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আজিজ এবং সিরাজ সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি। অভিযোগ উঠেছে বিকাল থেকে শুরু হওয়া মুখোমুখি অবস্থান রাতে গিয়ে চরম সহিংসতায় রূপ নেয়; সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তবে ,কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিষয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।  সিরাজ ও আজিজ পক্ষ এবং সাধারণ মানুষ সবাই একমত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে সেবিষয়ে। এঘটনায় গুরুত্বর আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন অন্তত ৪ জন।
আব্দুল আজিজ গণমাধ্যমকে বলেন, সিরাজ মন্ডলের উপস্থিতিতে তাঁর লোকজন পিস্তল বোমা সহকারে হামলা চালায় মশালের কর্মীদের নির্বাচনী কার্যালয়ে।
এ প্রসঙ্গে নৌকার প্রার্থী সিরাজ মন্ডলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে তিন দিনেও সম্ভব হয়নি।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৬ নভেম্বর রাতে ওই ঘটনাস্থলে (রামকৃষ্ণপুর) পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়। সেখানে কোন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি এমনকি ব্যবহারও হয়নি। দৌলতপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। প্রতিটা ঘটনার আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম শুক্রবার বিকালে প্রতিবেদককে বলেন রামকৃষ্ণপুরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে, তবে একাধিক কি-না সে প্রসঙ্গ এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে রামকৃষ্ণপুর এলাকায় ভোটের মাঠে অবৈধ দেশীয় অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন ইউনিয়নটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র। সাধারন মানুষের মধ্যেও আতঙ্কের এই গুঞ্জন কম নয়। চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী, চাইছেন দৌলতপুর পুলিশের সার্বিক সহযোগীতা।
আরেকদিকে, বুধবার ১৭ নভেম্বর রাতে উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মকবুল হোসেনের ছেলেসহ ৫-৭ জনের ওপর অতর্কিত হামলার অভিযোগ ওঠে। এখানে মকবুল হোসেন দাবি করছেন, প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দি আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল বাকী’র লোকজন নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার  (নৌকার) লোকজন তাদের ধাওয়া করে, তার প্রেক্ষিতে আনারসের লোকজন আমার ছেলে সহ আমার কর্মী সমর্থকদের ওপর স্বসস্ত্র হামলা চালায়। কয়েক রাউন্ড ফায়ার হয়েছে।
ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, আদাবাড়িয়ার ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলের গুলি এবং হাতে বানানো বোমা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
আব্দুল বাকীসহ তার কর্মী সমর্থকেরা দাবি করছেন সেখানে পুরোটাই একটা নাটক সাজানো হয়েছে। নির্বাচনের মাঠে মিথ্যা গুজব সৃষ্টির জন্য এঘটনায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পূর্ণ অবাস্তব।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সুত্র বলছে, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় আহতদের মধ্যে যারা চিকিৎসাধীন ছিলেন তাদের আঘাতের চিহ্ন দেখে আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাত বলে মনে হয়নি। অধিকাংশই সাধারণ কাটাছেঁড়া, থ্যাঁতলানো আঘাত।
আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে অন্তত দশ জনের সাথে আলাদা আলাদা কথা বললে তারা জানায়, এলাকাবাসীর অনেকেই মনে করছেন এখানে কোন গোলাগুলি কিংবা বিস্ফোরণ হয়নি।
দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতা এবং সহিংস উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। দৌলতপুর থানা বলছে, সবধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  (ভেড়ামারা সার্কেল) ইয়াছির আরাফাত বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখতে নিয়মিত কাজ করছে পুলিশ।
সব মিলিয়ে সহিংসতার শঙ্কা এবং সহিংসতা পরবর্তী মিশ্র তথ্যে উদ্বিগ্ন ভোটাররা। সহিংসতার ইস্যু গুলোতে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তৈরি হয়েছে তীব্র সমালোচনা। যতদ্রুত সম্ভব অবৈধ অস্ত্র সনাক্ত এবং উদ্ধারের জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply