নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই হদিস নেই বিভাগীয় জেলা খুলনায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তালিকায় থাকলেও বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই দলগুলোর। অনেক দলের নামই জানেন না সাধারণ মানুষ। আবার কয়েকটি দলের কার্যক্রম চলছে হাতে গোনা নেতার নেতৃত্বে।
তবে কার্যক্রম থাকলেও কার্যালয় নেই জাসদ, জেপি, জেএসডি, সাম্যবাদী দল, পিপলস পার্টি ও ন্যাপের।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রথমবারের মতো ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। এ জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ সংযুক্ত করা হয়। এতে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য গত বছরের (২০২২) মে মাস থেকে আবেদন নেওয়া শুরু করে। দুই দফা সময় বাড়িয়ে একই বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৯৩টি দলের আবেদন গ্রহণ করে। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে ৮১টি দলের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
বাকি ১২টি দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য যাচাই শেষে আর হরেক বিবেচনায় চলতি বছর নিবন্ধন পাওয়া পাঁচটি দল হচ্ছে- তৃণমূল বিএনপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি (বিএসপি)।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মিলন মোহন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা অস্থায়ী দপ্তরের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তবে স্থায়ী দপ্তর নেই।’
সাম্যবাদী দলের খুলনা জেলা সম্পাদক এফ এম ইকবাল জানান, দুটি এলাকায় তাদের দপ্তর রয়েছে। দলীয় কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনের এস এম আজমল হোসেন বলেন, ‘খুলনায় দলের নগর কমিটি না থাকলেও জেলা কমিটি রয়েছে। আমরা গতানুগতিক ধারায় রাজনীতি করতে চাই না। তাই কর্মকাণ্ড দেখা না-ও যেতে পারে। প্রচারে নয়, মানুষের সঙ্গে বিএনএম কাজ করতে চায়।’
ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) খুলনা জেলা শাখার সহসভাপতি অধ্যাপক রমা রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও তদারকির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ ক্ষেত্রে ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো তাদের ঠিক করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে সাধারণ মানুষ তিন-চারটি দলকে জানে। এর বাইরে দলগুলোকে রাজনৈতিক দল বলা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে তারা জনগণের জন্য কল্যাণকর কিছু করতে পারে না। এরা মূলত কাগুজে দল। কেউ কেউ জোট রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে গুরুত্ব বাড়িয়েছে। শর্ত পূরণ করতে পারার যোগ্যতাহীন কিছু দলকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
খুলনা জেলা নির্বাচন অফিসার ফারাজী বেনজির আহম্মেদ বলেন, রাজনৈতিক নিবন্ধনের বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাই এখানে জেলা পর্যায়ে কিছু করণীয় নেই।
তবে দল নিবন্ধনের পর তদারকি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তদারকি এখন সম্ভব নয়, জাতীয় নির্বাচনের পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।