নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক প্রবাসীর স্ত্রীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন আলা উদ্দিন চাঁদ নামে এক যুবক। সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক বছর যাবৎ তাকে ধর্ষণ করছেন আলা উদ্দিন। অভিযুক্ত আলা উদ্দিন চাঁদ উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের কিনারা গ্রামের আলী আক্কাছের ছেলে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বজনেরা জানান, স্বামীর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ওই নারীর পরিচয় হয় ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন চাঁদের সঙ্গে। পরে তার দোকান থেকে দালান ঘরের জন্য টাইলস, রং ও সেনিটারি মালামাল ক্রয় করে ওই নারী।
এ সম্পর্কের সূত্র ধরে আলা উদ্দিন তার স্ত্রীকে দিয়ে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করান এবং তার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নেওয়ান। একপর্যায়ে ওই নারী ভিডিও কলে কথা বললে তার টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান আলা উদ্দিন। বাধ্য হয়ে ভিডিও কলে কথা বলেন প্রবাসীর স্ত্রী।
কিছুদিন পর ভিডিও কলে নগ্ন না হলে টাকা ফেরত দেবেন না বলে শর্ত দেন আলা উদ্দিন। সেই শর্ত পালনের সময় ভিডিও ধারণ করে রাখেন তিনি।
এর পর থেকে ওই ভিডিও স্বামী-দেবরসহ অন্যদের কাছে পাঠানোর হুমকি দিয়ে এক বছর ধরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন আলা উদ্দিন। এ সময়ে তিনি ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই প্রবাসীর স্ত্রী ছাড়াও আরো একাধিক নারীকে ধর্ষণ ও তাদের গোপন ভিডিও ধারণের অভিযোগ রয়েছে আলা উদ্দিন চাঁদের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিনারা গ্রামের এক বৃদ্ধ জানান, তার বিরুদ্ধে অনেক নারীকে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রামবাসী অসংখ্যবার সালিস বৈঠক করেছে। কিন্তু সে কাউকে পরোয়া করে না। হামলা ও অপমানের ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আলা উদ্দিন চাঁদ ও তার স্ত্রী আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে। পরে ওই ভিডিও আমার স্বামী, আত্মীয়দের এবং অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমাকে এক বছর যাবৎ ধর্ষণ করে। তারা আমার কাছ থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
পরে সে আমার কাছে আরো টাকা দাবি করে, আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সে ওই ভিডিওগুলো আমার দেবরের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমি আলা উদ্দিন চাঁদ ও তার স্ত্রীর বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আলা উদ্দিন চাঁদের স্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব খারাপ কাজ করে ফেলেছি। যেহেতু আমি সন্তানসম্ভবা ছিলাম তাই বাইরে কোথাও গিয়ে সম্মান নষ্ট করতে পারে, এমন চিন্তা থেকেই আমার স্বামীকে আমাদের বাড়িতে ওই নারীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কের সুযোগ করে দিয়েছি’।
ধর্ষণ ও প্রতারণায় অভিযুক্ত আলা উদ্দিন চাঁদ নিজেকে নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ সদস্য ও ইউপি মেম্বার পদে প্রার্থী দাবি করে বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার কিছু প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার স্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আলা উদ্দিন চাঁদ বলেন, ‘আমার স্ত্রী কেন এসব কথা বলেছে আমি জানি না’।
ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছির বলেন, অপরাধীর অপরাধ প্রমাণসাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার, আর কেউ যেন এমন অপরাধ করার সাহস না পায়।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।