ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।।
অভিমান করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া হবিগঞ্জ জেলা সদরের লোকরা ইউনিয়নের আশেরা গ্রামের মৃত সফর আলীর ছেলে তৈয়ব আলী (৪৪)।
হবিগঞ্জ থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৬বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থেকে তৈয়ব আলী (৪৪) নামের এ ব্যক্তির সন্ধান মিলে।
দিনমজুরের কাজ করছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামে। সেই তৈয়ব আলীর সন্ধান ৬বছর পরে পেল পরিবারের সদস্যরা।
তৈয়ব আলীর ভাতিজা আজগর আলী জানান, তার চাচা তৈয়ব আলী পেশায় রিকশা চালক ছিলেন। বিয়ে করেছিলেন ৪টি। প্রথম স্ত্রী ৩ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে মারা যান। সন্তানেরা সবাই ঢাকা একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তৈয়ব আলী। ২য় স্ত্রীও মারা গেলে ৩য় বিয়ে করেন আবার। ৩য় স্ত্রীর সাথে বনিবনা হচ্ছিল না তার। যার কারনে তালাক দিয়ে চলে যান তয় স্ত্রী। ৩য় স্ত্রী চলে গেলে আবার ৪র্থ বিয়ে করেন। ৪র্থ স্ত্রী নিয়ে অভাব-অনটনের চলছিল চাচার সংসার। প্রয়োজনের তাগিদে চাচার শেষ সম্বল বসতবাড়ি বিক্রি করে ফেলেন। যার ফলে চাচার চতুর্থ স্ত্রী ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। তারপর তিনি এগুলো সহ্য না করতে পেরে বাড়ি থেকে চলে আসেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তৈয়ব আলীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলনা।
তিনি জানান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার চাচা ফরহাদ আহমদে আব্বাস ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুনিরুল ইসলাম ভুইয়ার সহযোগিতায় দীর্ঘ ৬ বছর অনেক খোঁজাখুঁজি পর গত শনিবার চাচা তৈয়ব আলীর খোঁজ মিলে। অসচেতন অবস্থায় তার চাচা তৈয়ব আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আজকে অসুস্থ চাচাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছি। তার চাচা যেমনই হউক অবশেষে চাচাকে পেয়ে খুব আনন্দিত।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন তৈয়ব আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি রাতে রেলওয়ে স্টেশনের পরিত্যক্ত ঘরে বসবাস করতেন। গত কয়েক দিন আগে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার মাধ্যমে জানি। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে এদিন রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, তার কাছে থাকা একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের সূত্র ধরে বিজয়নগরের ইউএনও মহোদয় তৈয়ব আলীর পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ শুরু করেন। অবশেষে তার পরিবারের সন্ধান হবিগঞ্জে পাওয়া যায়।
এই বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. ইয়াসির আরাফাত জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি জানালে তৈয়ব আলীর সাথে থাকা আইডি কার্ডের ঠিকানা খোঁজ করা হয়। আমি হবিগঞ্জ সদরের ইউনিয়নের সাথেও বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করি। অবশেষে তার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়৷
পরিবারের কাছে তৈয়ব আলীকে হস্তান্তর বিষয়ে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম নিশ্চিত করে জানান, গতকাল রাতে তৈয়ব আলীর ভাগিনা লিমন মিয়া ও ভাতিজা আজগর আলীর কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাপত্র গুলো তাদের হাতে দেওয়া হয়৷