অস্ত্র কিনে দেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে নব্য সংগঠিত জঙ্গিরা। শীর্ষস্থানীয় অন্তত ১০ জঙ্গিসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার ২৮ সদস্য এখনো ধরা পড়েনি। সুযোগমতো দেশে তারা বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে বলে তথ্য রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৫ জন গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হলেও আত্মগোপনকারী জঙ্গিদের কাছে একে-৪৭, একে-২২সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে। তাদের কাছে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামও রয়েছে। এ ছাড়া নতুন আরো অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেছে তারা।
র্যাব ও পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনে ঠিক কত সদস্য রয়েছে, এর সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। গ্রেপ্তার হওয়া ৫৫ জন জঙ্গি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮০ জন যুবক নতুন জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়েছে। শুরু থেকে তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি, নিরাপদ সামরিক প্রশিক্ষণ, সংগঠনের প্রয়োজনে দেশে নাশকতা ও উগ্রবাদ প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, উগ্রবাদী নতুন এই সংগঠনটির আমির মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুন ওরফে মুমিন, সহকারী সামরিক প্রধান সৈয়দ মারুফ হোসেন ওরফে মানিক, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশাররফ হোসেন, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজ এবং আলেম বিভাগের প্রধান শায়খ দাদুভাইসহ অন্তত ১০ জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গ্রেপ্তার করা জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে র্যাব জানায়, বর্তমানে এই জঙ্গিগোষ্ঠী সদস্যদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে পাহাড়ের নতুন সশস্ত্রগোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। মূলত এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে অস্ত্র কিনছে তারা।
সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন নতুন জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান মাসুদ ওরফে রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধা। তাঁদের মোবাইল ফোন থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ভিডিও জব্দ করা হয়। নতুন জঙ্গি সংগঠনটি নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন।
সম্প্রতি গ্রেপ্তার সংগঠনটির সামরিক কমান্ডার মাসুকুর রহমান মাসুদ ওরফে রনবীরের কাছ থেকে পাওয়া ইলেকট্রনিক ডিভাইসে পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও উদ্ধার করা হয়। পরে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় কিছু কাগজপত্র। এসব থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন জঙ্গি সংগঠন সদস্যদের অস্ত্রের উৎস নিয়ে তদন্ত শুরু করে র্যাব। এ পর্যন্ত যে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে, তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, কেএনএফের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কয়েক দফায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র কিনেছেন নতুন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এ পর্যন্ত তাঁরা নানা ধরনের ৭০টি অস্ত্র কিনেছেন। এ ছাড়া তাঁরা একে-৪৭ রাইফেলের গুলিও সংগ্রহ করেছেন। তথ্য রয়েছে, কেএনএফের কাছে একাধিক একে-৪৭ রাইফেল রয়েছে।
র্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কুকি-চিনের কাছ থেকে জঙ্গিরা অস্ত্র পেয়েছে।
র্যাব বলেছে, কেএনএফের শীর্ষ নেতা নাথান বমের সঙ্গে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফের ছত্রচ্ছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে চুক্তিও হয়। জঙ্গিরা এরই মধ্যে কেএনএফের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকার অস্ত্র কিনেছে। প্রশিক্ষণ শেষে জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্র সমতলে পাঠানোর কথা ছিল।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন