মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
২৮ জুলাই, ২০২১
জীবন-মৃত্যু সবার অজানা : প্রতিটি প্রাণীই মরণশীল। যেকোনো সময় যে কারো মৃত্যু দরজায় এসে হাজির হতে পারে। আর তখনই মানুষকে দুনিয়ার সব মায়া ত্যাগ করে মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিতে হয়। মহান আল্লাহ যখন যার মৃত্যু লিখে রেখেছেন, তার চেয়ে এক মুহূর্তও কম-বেশি বাঁচার সাধ্য কারো নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না, যেহেতু সেটার মেয়াদ সুনির্ধারিত। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৫)
মৃত্যুর পর নমিনির দায়িত্ব : অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুর সময় আল্লাহ তাআলার কাছে লিপিবদ্ধ রয়েছে। মৃত্যুর দিন, তারিখ, সময় সবই নির্ধারিত, নির্দিষ্ট সময়ের আগে কারো মৃত্যু হবে না এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরও কেউ জীবিত থাকবে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ তার অর্থ-সম্পদের হিসাব-নিকাশ তার পরিবার-পরিজনদের বুঝিয়ে দিয়ে যেতে পারে না। তুলে দিয়ে যেতে পারে না বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায় বিনিয়োগ করা অর্থ-কড়ি। ফলে পরিবারের মানুষরা সেই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তার গচ্ছিত বা বিনিয়োগকৃত অর্থ-কড়ি তুলতে দারুণ বিপাকে পড়তে হয়। কিন্তু কেউ যদি তার জীবদ্দশায় তার পরিবারের কাউকে নমিনি হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়ে যান, যে তার অবর্তমানে ওই অর্থ-কড়ির আইনি অধিকার পায় এবং পরিবারের পক্ষ থেকে সে অর্থ-কড়ি সহজে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে মারা যান, তাহলে পরবর্তী সময়ে এ টাকার মালিক কে হবেন? মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া টাকাপয়সা কিভাবে বণ্টন হবে, কারা পাবেন, কিভাবে পাবেন, এ বিষয় অনেকের কাছেই অজানা। আবার অনেক সময় সঠিক তথ্য না জানার কারণে রেখে যাওয়া টাকাপয়সা থেকে বঞ্চিত হতে হয় প্রকৃত হকদারকে। এ নিয়ে বিভিন্ন পরিবারে ঝগড়াঝাঁটি ও মামলা মোকদ্দমার মতো ঘটনাও ঘটে।
নমিনি সম্পদের একক মালিক নন : নমিনি হলেন একজন প্রতিনিধি মাত্র, যিনি নিজ দায়িত্বে মৃতের রেখে যাওয়া টাকাগুলো গ্রহণ করে যার যার অংশ তাকে দিয়ে দেবে। ইসলামের দৃষ্টিতে নমিনি মানেই মালিক নয়। কাউকে নমিনি বানালেই সে অ্যাকাউন্টধারীর মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে বা ব্যবসায় গচ্ছিত টাকার মালিক হবে না। সে তার মা-বাবা হোক, স্ত্রী হোক, ভাই হোক, ছেলে হোক বা অন্য কেউ; বরং ওই টাকা মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা তাদের অংশ অনুযায়ী পাবে। এ ক্ষেত্রে যাকে নমিনি বানানো হয়েছে সেও যদি ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের কেউ হয়, তবে তার নির্দিষ্ট অংশ পাবে। এর বেশি নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১২/৫৩০)
তাই কেউ কারো নমিনি হলেই তার মৃত্যুর পর সে সম্পদ একা ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা যদি সেই সম্পদ সম্পর্কে না-ও জানে, নমিনির উচিত, সে সম্পদগুলো নিজ দায়িত্বে গ্রহণ করে ইসলামী আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া। কারণ এটা ওয়ারিশদের হক। তবে নমিনি যদি প্রমাণ দিতে পারে যে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার তার জীবদ্দশায় নমিনিকেই এই অর্থের মালিক বানিয়ে গেছেন, তাহলে সে সম্পদে অন্য ওয়ারিশদের কোনো অংশ থাকবে না।