অনলাইন ডেস্ক:মেট্রো রেলে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে যাত্রী চলাচল শুরু করলেও এখনো বাকি রয়েছে আরো দুই ধাপ। কমলাপুর পর্যন্ত পুরো পথে মেট্রো রেল চলবে ২০২৫ সাল নাগাদ। তবে চলতি বছর নভেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। নভেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে মেট্রো রেল বাস্তবায়নকারী ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বর্তমানে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্টেশনের ভেতরের কাজ। এর মধ্যে রয়েছে স্টেশন কন্ট্রোলরুম স্থাপন, বিদ্যুতের সাবস্টেশন স্থাপন এবং প্ল্যাটফরমের অবকাঠামোর কাজ। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মতিঝিল পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ। বর্তমানে চলছে স্টেশনের ভেতর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ।
আগামী জুলাইয়ের মধ্যে অবকাঠামোর কাজ শেষ হবে। এরপর ৪৫ দিনের পরিচালনগত পরীক্ষা শেষে যাত্রী নিয়ে এই পথে চলতে শুরু করবে মেট্রো রেল।
মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন ৬-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাক) মো. জাকারিয়া বলেন, ভৌত অবকাঠামোর কাজ শেষ হলে শুরু হবে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। এরপর জুলাই মাসে পুরো পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানোর লক্ষ্য ছিল আমাদের। তবে সরকার নভেম্বরের মধ্যে ট্রেন চলাচলের নির্দেশ দেওয়ায় এখন আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’
রাজধানীর যানজট কমাতে ২০১২ সালে মেট্রো রেলের এমআরটি লাইন-৬-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রকল্প নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
তবে দ্বিতীয় সংশোধনীতে মতিঝিল থেকে বাড়িয়ে মেট্রো রেল কমলাপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো চালানোর কথা রয়েছে। তবে এর আগেই ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক গড় অগ্রগতি ৯৪.৪৩ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি ৯৯.৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি ৯৩.৮৫ শতাংশ। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত কাজ হয়েছে ২.৩০ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৯.৩৪ শতাংশ।উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো কাজকে ৯টি প্যাকেজে বিভক্ত করে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ ৫-এর অধীন আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩.২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট। বর্তমানে এই প্যাকেজের আওতাধীন মেট্রো রেলস্টেশনগুলোয় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথের কাজ করা হচ্ছে।
প্যাকেজ-৬-এ কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪.৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনে রুফ শিট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। মতিঝিল মেট্রো রেলস্টেশনে রুফ শিট বসানোর কাজ চলছে। এই প্যাকেজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৩.৮৭ শতাংশ।
পরীক্ষামূলক চলাচলের ধাপ কমবে : প্রকল্পের চলমান কাজ ও যাত্রী চলাচল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমটিসিএলের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের পরিকল্পনা করেই আগাচ্ছিলাম। সরকার নতুন করে নভেম্বর সময় বেঁধে দিয়েছে। ফলে প্রথমে মেট্রো রেল চলাচলের ক্ষেত্রে চার ধাপে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হলেও এবার সেটা হবে না। পরীক্ষামূলক চলাচলের ধাপ কমবে। বেশি গুরুত্ব পাবে ‘ইন্ট্রিগেশন টেস্ট’।
যুক্ত হবে সাত স্টেশন : বর্তমানে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত মোট ৯টি স্টেশনে মেট্রো চলাচল করছে। মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে মেট্রো। এই পথে যুক্ত হবে নতুন আরো সাতটি স্টেশন।