অহিদুল ইসলাম, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ মুক্ত দিবস উপলক্ষে একুশে পরিষদ নওগাঁ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়েছে। করনোভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবারের কর্মসূচি সংক্ষিপ্তভাবে পালন করা হয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় জাতীয় পাতাকা, ব্যানার ফেস্টুসহ প্যারীমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। সংগঠনের কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের মুক্তির মোড় স্মৃতি ফলকে গিয়ে শেষ হয়। এসময় সংগঠনের সভাপতি অ্যাড. ডি.এম আব্দুল বারীর সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান, বিন আলী পিন্টু, কায়েস উদ্দিন, অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, অ্যাড. মুকুল চন্দ্র কবিরাজ, প্রতাপ চন্দ্র সরকার, সুবল চন্দ্র মন্ডল, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাাক প্রমুখ।
পরে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। উল্লেখ্য যে, নওগাঁ মুক্ত দিবস দিনটি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে দিনটি পালন করে আসছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয় দিবস পালিত হলেও দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এদিন প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানি সেনা নওগাঁয় যৌথবাহিনী কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। এ খবর শোনার পরও নওগাঁর পাকিস্তান সেনাবাহিনী অত্মসমর্পণ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসম্পর্ণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়।
ফলে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে পর দিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকাল। মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের জগৎসিংহপুর, খলিশাকুড়ি, শিবপুর, হাট-নওগাঁ থেকে শহরে দিকে আসতে দেখে পাকিস্তানি সেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা শহিদ হলেন : তাঁরা হলেন এচাহাস আলী খান (শৈলগাছি, বাঁকাপুর গ্রাম), শহিদ ফরিদ হোসেন (বদলগাছির সর্মাপুর গ্রাম), শহিদ আমজাদ হোসেন (বদলগাছির বিলাশবাড়ি গ্রাম), শহিদ ওসমান (বদলগাচছর কেশাইল গ্রাম), শহিদ শাহাদত আলী মীর (বদলগাছির বলরামপুর গ্রাম) এবং কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা অছিম উদ্দিন (তিলকপুরের নওজোর গ্রাম)। ১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিল না।
ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারি গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে। তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতান কালেক্টরেট (এসডি) অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। ফলে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর।